লালন সঙ্গীতের অপব্যাখ্যা করে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ এর অজুহাতে গ্রেপ্তার ও হয়রানির তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়েছে নারীপক্ষ। মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানিয়েছে ‘ধর্মীয় অনুভূতি’র বিষয়টি অত্যন্ত আপেক্ষিক এবং যার যার ব্যক্তিগত বিষয়। কোন যুক্তিসঙ্গত বক্তব্য বা বাস্তব বিশ্বাসের কথা বললে অথবা মতামত প্রকাশ করলেই তাকে ধর্মের সঙ্গে যুক্ত করাটা নিছক উষ্কানি ছাড়া আর কিছুই নয়। এজন্য কেউ কারো বিরুদ্ধে যেনতেনভাবে অভিযোগ তুললেই তাকে গ্রেপ্তার, হয়রানি বা কোন প্রকার নির্যাতন করা অমানবিক এবং আইনের অপব্যবহারমাত্র।
পত্রিকা ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, আমাদের সঙ্গীত ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ বাউল সাধক লালন- এর ‘সবলোকে কয় লালন কি জাত সংসারে…’ গানের দুটি লাইন লিখে নিজের ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ এর মৌখিক অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় গত ২৮ এপ্রিল ২০ শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার মহিষার ইউনিয়নের হরি নারায়ণ রক্ষিতের ছেলে সঞ্জয় রক্ষিতকে (৪০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। লালন সঙ্গীতের অপব্যাখ্যা করে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ এর অজুহাতে এই গ্রেপ্তার আমাদের শাশ্বত সংস্কৃতিকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র। দেশে এই ধরনের ঘটনা এটাই প্রথম নয়, এর আগেও ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ এর অজুহাতে ডিজিটাল নিরা আইনের আওতায় বেশ কয়েকজনকে বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে গ্রেপ্তার, নির্যাতন, হয়রানি এবং কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি দ্বারা জ্বালাও-পোড়াওসহ অনেক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, যা মানুষের নাগরিক অধিকারকে হরণ করেছে।
মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এই তৎপরতা ক্ষমতার অপব্যবহার এবং আমাদের সংস্কৃতি ধ্বংসের প্রবণতারই বহিঃপ্রকাশ। স্বাধীন দেশের একজন নাগরিক যেকোনো মাধ্যমে তার মতামত স্বাধীনভাবে প্রকাশ করবে বা সংস্কৃতির চর্চা করবে তার নাগরিক অধিকার। তাছাড়া, যেখানে প্রমাণসহ লিখিত অভিযোগের বিষয়গুলোও প্রায়শই গুরুত্ব পায় না সেখানে এমন একটি অহেতুক মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট এই কর্মকর্তার এই তৎপরতা তার ক্ষমতার অপব্যবহার এবং আমাদের সংস্কৃতি ধ্বংসের প্রবণতারই বহিঃপ্রকাশ।