সাতক্ষীরা উপকূলীয় অঞ্চলের বেশির ভাগ জমিই লবণাক্ত। এসব জমিতে ঘের তৈরি করে চিংড়ি চাষ করেন সেখানকার কৃষক। তবে শুষ্ক মৌসুমে চিংড়ির উৎপাদন ভালো না হওয়ায় উপকূলীয় এলাকায় ঘেরের জমিতে লবণসহিষ্ণু বোরো ধান চাষ করছেন কৃষকরা।
চলতি মৌসুমে জেলার সাতটি উপজেলায় ৭৯ হাজার ৭৭৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে, যা থেকে ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৭৭১ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গত মৌসুমে চাষ হয়েছিল ৭৯ হাজার ৫২৬ হেক্টর জমিতে। এক বছরে ২৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ বেশি হয়েছে। স্থানীয় কৃষক জানান, লবণাক্ত জমিতে বোরো ধান উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন তারা। নোনা পানির মৎস্য ঘেরে চিংড়ি ছাড়া অন্য কিছু হতো না, সেখানে লবণসহিষ্ণু ধান চাষ করছেন তারা। চিংড়ির পাশাপাশি শুষ্ক মৌসুমে ধান উৎপাদন করে বাড়তি আয় হচ্ছে তাদের।
আশাশুনি উপজেলার মহাজনপুর গ্রামের চিংড়ি চাষী পলাশ হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে ২৫ বিঘা জমির মাছের ঘেরে লবণসহিষ্ণু ২৬ জাতের বোরো ধান চাষ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। প্রাকৃতিক কোনো বিপর্যয় না ঘটলে পাঁচ-ছয় দিনের মধ্যে ধান কাটবেন। বিঘাপ্রতি ৭ হাজার টাকা হারে ২৫ বিঘায় ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে তার। ২৫ বিঘায় ৬২৫-৬৩০ মণ ধান উৎপাদন হবে। যার বাজার দাম কমপক্ষে ৭ লাখ টাকা। ফলে উৎপাদন খরচ তুলেও ৫ লাখ টাকার বেশি লাভ হবে তার। দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নের বিলশিমুলবাড়িয়ার মৎস্যচাষী নজরুল ইসলাম জানান, ১২ বিঘা জমির চিংড়ি ঘেরে ব্রি-৬৭ জাতের বোরো ধান চাষ করেছেন তিনি। অন্যান্য জাতের ধানের চেয়ে বি-৬৭ লবণ সহ্য করতে পারে বেশি। তাছাড়া রোগবালাইও কম। বিঘায় সর্বনিম্ন ১৫ বস্তা করে ধান উৎপাদন হবে। এ হিসাবে ১২ বিঘায় ১৮০ বস্তা ধান উৎপাদন হবে। প্রতি বস্তা ধান ১ হাজার ৯০০ টাকা হারে ১৮০ বস্তা ধানের বাজার দর ৩ লাখ ৪২ হাজার। ১২ বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ৭২-৭৫ হাজার টাকা। চলতি মৌসুমে চিংড়ি ঘেরে বোরো ধান উৎপাদন করে আড়াই লাখ টাকার বেশি লাভ হবে তার। এটি বাড়তি লাভ। কারণ শুষ্ক মৌসুমে ঘেরে চিংড়ি উৎপাদন ভালো হয় না। মাত্র চার মাসের ফসল হিসেবে ধান উৎপাদন বাড়তি লাভ। তাছাড়া লবণাক্ত জমিতে চিংড়ি ছাড়া আর কিছু চাষ করা সম্ভব ছিল না। কয়েক বছর ধরে লবণ পানির চিংড়ি ঘেরে বোরো ধান চাষ করছেন তারা।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ মৌসুমে জেলার সাতটি উপজেলায় ৭৯ হাজার ৭৭৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। এ থেকে ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৭৭১ টন চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদরে ২৩ হাজার ২৫০ হেক্টর, কলারোয়ায় ১২ হাজার ৬৫৫, তালায় ১২ হাজার ১৫৫. দেবহাটায় ৬ হাজার ১২৫. কালীগঞ্জে ৬ হাজার ৯৪৬, আশাশুনিতে ৯ হাজার এবং শ্যামনগরে ২ হাজার ৩১০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। গত মৌসুমে জেলায় ৭৯ হাজার ৫২৬ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছিল। সে হিসাব অনুযায়ী চলতি মৌসুমে ২৫০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ বেড়েছে। এছাড়াও গেল মৌসুমে বোরো চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ১২ হাজার ৮২৫ টন।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘উপকূলীয় এ জেলায় লবণসহিষ্ণু বিভিন্ন জাতের ধান উৎপাদন হচ্ছে। যেসব লবণ পানির মাছের ঘেরে চিংড়ি ছাড়া অন্য কিছু হতো না, সেখানে এখন ধান চাষ হচ্ছে। চলতি মৌসুমে জেলায় বিনা-১০, ব্রি-৬৭, ৯৭, ৯৯ এবং বিএডিসির উদ্ভাবিত এস.এল-৮ এইচ জাতের লবণসহিষ্ণু ধান চাষ হয়েছে। এসব জাত ১০-১৩ ডিএস পর্যন্ত লবণ সহ্য করতে পারে। জেলায় মোট বোরো ধানের ২০ শতাংশই লবণাক্ত জমিতে চাষ হয়েছে।