এমভি আবদুল্লাহর হাইজ্যাক হওয়ার ২৭তম দিন পার হয়ে গেলেও জিম্মি মুক্তির বিষয়ে খুব বেশি অগ্রগতি আছে দাবী করা যাচ্ছে না। তবে আশা করা যাচ্ছে, ঈদের ১০-১৫ দিনের মধ্যেই হয়তো জিম্মি ২৩ নাবিককে উদ্ধার করা সম্ভব হবে।
গতকাল শনিবার (৬ এপ্রিল) সকালে চট্টগ্রামে এ ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশি জাহাজ ও ২৩ নাবিককে মুক্তি দিতে সোমালিয়ার জলদস্যুদের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি নানামুখী চাপও অব্যাহত রাখা হয়েছে। জলদস্যুদের সঙ্গে যেহেতু আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছে, আমরা আশা করছি, খুব শিগিগিরই জিম্মি নাবিকদেরকে মুক্ত করা সম্ভব হবে। এছাড়া সোমালীয় জলদস্যুদের হাত থেকে জিম্মি নাবিকদেরকে ঠিক কবে নাগাদ মুক্ত করা সম্ভব হবে, সে ব্যাপারে খানিকটা ইঙ্গিত মিলেছে বাংলাদেশ নৌ-বাণিজ্য অধিদপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদের কথায়। তিনি বলেছেন, ঈদের পর ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই জিম্মি জাহাজ ও ২৩ নাবিককে উদ্ধার করা হবে।
এর আগে শনিবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে প্রকাশিত হয়েছে, জিম্মি এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের ২৩ নাবিককে মুক্ত করতে চূড়ান্ত হয়েছে পণের টাকা। বীমা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জলদস্যুদের সঙ্গে মুক্তিপণের অর্থ নিয়ে দরকষাকষির পর মুক্তিপণের টাকার পরিমান নির্ধারিত হয়েছে। এর ফলে, ঈদের আগেই মুক্তি মিলতে পারে বন্দি ২৩ নাবিকের। তবে মুক্তিপণের টাকা নির্ধারিত হলেও তার পরিমান জানা যায়নি। মুক্তিপণ কোন প্রক্রিয়ায় দস্যুদের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে। এরপর ঠিক হবে মুক্তির দিনক্ষণ। এদিকে সোমালীয় জলদস্যুদের হাত থেকে এখনও মুক্তি মেলেনি জাহাজের ২৩ নাবিকের। সোমালিয়ার উপকূলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে জাহাজের ভেতর জিম্মি অবস্থায় প্রতিটা মূহুর্ত কাটছে তাদের। চরম উৎকণ্ঠায় একেকটা মূহুর্ত কাটছে জিম্মি নাবিকদের স্বজনদেরও। ঈদে প্রিয়জনকে ফিরে পেতে পথ চেয়ে আছেন পরিবারের প্রত্যেকটা সদস্য। স্বজনদের সেই ভরসা দিতে না পারলেও মুক্তির সুখবর দিয়েছে সরকার ও মালিকপক্ষ।
হাইজ্যাক হওয়া জাহাজটির মালিকপক্ষ কেএসআরএমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিমও বলেছেন, খুব শিগগির সুখবর আসছে। দস্যুদের সঙ্গে চূড়ান্ত সমঝোতার ক্ষেত্রে আরও কিছু বিষয় বাকি আছে। তবে আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছে। চূড়ান্ত ধাপের আলোচনা চলছে। এই মূহুর্তে এর বাইরে আর কিছু জানাতে চাননি তিনি। নাবিকদের স্বার্থরক্ষাকারী সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলছেন, জলদস্যুদের সঙ্গে মালিকপক্ষের আলোচনা হয় দুই ধাপে। প্রথম ধাপে মুক্তিপণ ও তা নিয়ে দর-কষাকষি হয়। কখন, কোন মাধ্যমে মুক্তিপণ পরিশোধ করা হবে, তা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয় এ ধাপে। দ্বিতীয় ধাপে উভয়পক্ষের বিশ্বাসযোগ্য জায়গায় ও নির্ধারিত পন্থায় মুক্তিপণ পরিশোধের মাধ্যমে জাহাজ ও জিম্মি নাবিকদের মুক্ত করে আনার কাজ হবে।
ঈদের পরই জিম্মি নাবিকরা জন্মভূমিতে ফিরতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনাম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘জিম্মি মুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে বলে জানতে পেরেছি। তবে ঈদের পরই আসল কাজটা সম্পন্ন হবে; ঈদের আগে নয়।’ উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগর থেকে ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজকে হাইজ্যাক করে সোমালীয় দস্যুরা। এরপর জলদস্যুরা জাহাজের মালিকপক্ষের সঙ্গে তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো যোগাযোগ করে ২০ মার্চ। এর আগে ১৬ মার্চ রাত ৮টায় ওই জাহাজের এক নাবিকের সঙ্গে মালিকপক্ষের আলাপ হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, জলদস্যুরা এখন নিয়মিত পরিবার ও মালিকপক্ষের সঙ্গে জিম্মি নাবিকদের আলাপ করতে দিচ্ছে।
এর আগে ২০১০ সালে একই প্রতিষ্ঠানের জাহাজ এমভি জাহান মণি ২৬ নাবিকসহ সোমালীয় জলদস্যুদের কবলে পড়ে। সেবার প্রায় চার মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ দিয়ে জাহাজ ও নাবিকদের উদ্ধার করা হয়েছিল। সেই এমভি জাহান মণির জিম্মি নাবিকদের মধ্যে ছিলেন মোহাম্মদ ইদ্রিসও। তিনি বলেন, তাদের ক্ষেত্রে আলোচনা চূড়ান্ত হওয়ার পর হেলিকপ্টার থেকে দুটি পানিরোধী কার্টনে মুক্তিপণের অর্থ সাগরে ফেলা হয়েছিল। দস্যুরা নৌযান নিয়ে গিয়ে প্যাকেট দুটি জাহাজে তুলে আনে। দাবিকৃত অর্থ বুঝে পেয়ে পরদিনই ভোরে জাহাজটি থেকে নেমে যায় দস্যুরা। এরপর জাহাজ আবার চলতে শুরু করে দেশের পথে।