রাজধানীসহ সারা দেশে বাংলা বর্ষবরণ আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি নির্বিশেষে সব মানুষ মিলিত হয় বাঙালির এই প্রাণের উৎসবে। রাজধানীতে রমনার বটতলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা, বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণ, পুরান ঢাকার ধুপখোলা মাঠে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের কাজ শুরু হয়েছে। ‘স্বাভাবিকতা ও পারস্পরিক সম্প্রীতির সাধনা’—এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ছায়ানট এবারও রমনার পশ্চিম পাশের লেকের ধারের বিখ্যাত বটমূল ঘিরে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা ৭ এপ্রিল থেকে সেখানে কাজ শুরু করবে। ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনে চলছে মহড়া। প্রায় দেড়শ শিল্পী মহড়ায় অংশ নিচ্ছেন।
ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমেদ লিসা কালবেলাকে বলেন, ১২ এপ্রিলের মধ্যে মঞ্চ তৈরি সম্পন্ন হবে। ঈদের দিন নববর্ষ প্রস্তুতির কাজ বন্ধ থাকবে। পহেলা বৈশাখের আগের দিন মঞ্চে শিল্পীরা চূড়ান্ত মহড়ার অংশ নেবেন।পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে জেলায় জেলায় বিভিন্ন কর্মসূচির উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। এবার যশোরে হবে তাদের সর্ববৃহৎ অনুষ্ঠানটি। এ ছাড়া খুলনা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, নেত্রকোনা, বরিশালে পহেলা বৈশাখের কর্মসূচি পালন করা হবে। এ ছাড়া উদীচী ঢাকায় ছায়ানটকে সহযোগিতা করবে। ছায়ানটের অনুষ্ঠান শেষে ঘরোয়াভাবে উদীচী কার্যালয়ে আনন্দ আয়োজন হবে বলে জানান বাংলাদেশ উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে। তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে নানা বিধিনিষেধ আরোপ ও সময় সংকুচিত করা হচ্ছে। তাই পহেলা বৈশাখের আগের দিন ঢাকাকেন্দ্রিক বা সারা দেশে আমাদের প্রতিবাদী কর্মসূচি থাকতে পারে। ‘আমরা তো তিমির বিনাশী’—এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ঢাবির চারুকলা অনুষদে ১৯ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রা প্রস্তুতি। ১ বৈশাখ ১৪৩১, রোববার সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদের প্রাঙ্গণ থেকে বের হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার দায়িত্ব পালন করছে ২৫তম ব্যাচ। ঈদের ছুটির কারণে এবার আগে থেকে কাজ শুরু হয়েছে।
মঙ্গল শোভাযাত্রার কমিটির সদস্য দেবব্রত বিশ্বাস বলেন, এবার মঙ্গল শোভাযাত্রায় চারটি কাঠামো নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হাতি, টেপা পুতুল, ঘাড় থেকে লেজ পর্যন্ত বনগুয়ের আর মাথাটা শেয়ালের মিশ্র অবয়ব এবং সভ্যতার অগ্রগতিতে অবদান রাখা চাকা থাকবে। কাঠামোর কাজ ৭০ শতাংশের বেশি সম্পন্ন হয়েছে। বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বাংলা একাডেমিতে চলছে বর্ষবরণ সংগীত ও নববর্ষ বক্তৃতার আয়োজন। বাংলা একাডেমির সংস্কৃতি উপবিভাগের উপপরিচালক সাইমন জাকারিয়া বলেন, পহেলা বৈশাখে সকাল ৮টায় বর্ষবরণ সংগীত পরিবেশন করবেন সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা। নববর্ষ বক্তৃতা দেবেন রাজনীতিবিদ, গবেষক ও লেখক ড. নুহ-উল-আলম লেনিন। সুরের ধারার আয়োজনে ‘হাজার কণ্ঠে বর্ষবরণ’ শিরোনামে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে। অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন ও অডিশন পর্ব শেষে বাছাই করা শিল্পীদের নিয়ে চলছে মহড়া। বিভিন্ন জেলা থেকে আগত হাজারো শিল্পীরা এক মঞ্চে গান পরিবেশন করবেন।
সুরের ধারার কর্ণধার রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বলেন, ঈদের আনন্দের সঙ্গেই এবার যুক্ত হচ্ছে পহেলা বৈশাখের আনন্দ। সবাইকে নিয়ে এবার পহেলা বৈশাখের আনন্দ উদযাপন করার চেষ্টা করছি। এবার আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। রমজান মাস চলছে। এরপর ঈদের ছুটি। আশা করি সব কিছু কাটিয়ে উঠতে পারব।