শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। এজন্য দেশের জনগণকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে আমাদের দেশে মোট ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। প্রতি বছর তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্যদিয়ে দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ার সুযোগ পায়। এসব শিক্ষার্থীকে সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে দেশ ও জাতির সম্পদে পরিণত করার জন্য সরকার একটা বড় বাজেট দিয়ে থাকে। আমাদের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা নিয়ে দেশ ও দেশের বাইরে জ্ঞান-বিজ্ঞানে বিশেষ অবদান রেখে চলেছে। তাদের কাজের মাধ্যমে আমাদের দেশকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। তবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যাদের এত অবদান তারাই বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকে অবহেলায়, অনাদরে।
বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আসে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে। আর প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক সংকট থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের হোস্টেলে কিংবা মেসে থেকে পড়াশুনা করতে হয়। অনেকে টিউশনি কিংবা পার্টটাইম জব করে নিজের খরচ বহন করেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে স্বল্প আয় দ্বারা চলা খুবই কষ্টকর। শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে যেখানে আগে ৪-৫ হাজার টাকায় হয়ে যেত, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্ব গতিতে সেখানে মাসে ৮ হাজার টাকায়ও হিমশিম খেতে হয়। অথচ সেই তুলনায় টিউশনিও অপ্রতুল। এমনকি টিউশনি করতে যেয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে শিক্ষার্থীরা। ফলস্বরূপ ৩ বেলা খাবারের জায়গায় দুইবেলা খাবার খাচ্ছে শিক্ষার্থীরা, ভুগছে পুষ্টিহীনতায়।
তারপরও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবাসিক সুবিধা যতটুকু পাওয়া যায় সেখানেও দেখা যায় অবহেলা রয়েছে অনিয়ম। আবাসিক হলগুলোতে যে খাবার পরিবেশন করা হয়, তা অত্যন্ত নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর। খাবারের পেছনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভর্তুকি দিলেও খাবারের মানের কোনো উন্নতি নেই। খাবার তৈরি করা হয় নোংরা পরিবেশে। এছাড়া রান্নায় ব্যবহার করা হয় পচা শাকসবজি, নিম্নমানের চাল। মাছ-মাংসসহ পচনশীল দ্রব্য সংরক্ষণ করা হয় নোংরা পরিবেশে। রান্না করা খাবার রাখা হয় খোলা পরিবেশে, যেখানে দেখা যায় খাবারের ওপর মশা-মাছির ছড়াছড়ি। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডালের ঘনত্ব সম্পর্কে কম-বেশি সবারই জানা। সোশ্যাল মিডিয়ায় হরহামেশাই এই নিয়ে ট্রল হয়। হলগুলোতে যে মাছ-মাংসের টুকরো দেয়া হয়, তা অত্যন্ত ছোট সাইজের। এছাড়া পরিবারের বাইরে থাকায় ৩ বেলা খাবারের বাইরে তেমন কোনো পুষ্টিকর খাবার খাওয়া হয় না অধিকাংশ শিক্ষার্থীর। যার ফলে হলে থাকা আবাসিক শিক্ষার্থীরা প্রায় সময় পুষ্টিহীনতায় ভোগে। ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবারের অভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পেয়ে প্রায় সময় রোগাক্রান্ত হয়।
আবাসিক হলগুলোতে খাবারের সমস্যা অনেক দিনের। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদাসীনতার কারণে মুনাফালোভী ডাইনিং পরিচালকরা আরো সুযোগ পাচ্ছে। ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রভোস্ট এসে তদারকি করে গেলে কিছুদিন খাবারের মান ভালো হয় কিন্তু আবার কিছুদিনের মধ্যেই যে সেই আগের অবস্থা। শিক্ষার্থীরা জাতির ভবিষ্যত। তাদের সুস্থ সুন্দর পরিবেশে জ্ঞান লাভ করা মৌলিক অধিকার। তাদের যাতে জ্ঞান অর্জনে ব্যাঘাত না ঘটে সেদিকে প্রশাসনের কার্যকর নজর দেয়া প্রয়োজন।