দোহাজারি-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার দুপুর একটায় এ স্টেশন উদ্বোধন করেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে নেটওয়ার্কের ৪৮তম জেলা হিসেবে যুক্ত হয়েছে কক্সবাজার। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের নগরী কক্সবাজারে এতদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সড়ক ও বিমান পথে পর্যটকদের আসার সুযোগ থাকলেও আজ থেকে যুক্ত হলো নতুন এক যোগাযোগ ব্যবস্থা।
দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের জন্য ২০১০ সালের ৬ জুলাই দোহাজারী-রামু-ঘুমধুম রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। মেগা প্রকল্প হিসেবে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরবর্তীতে টেন্ডার হলে দোহাজারি-চকরিয়া এবং চকরিয়া-কক্সবাজার (লট-১ ও লট-২) এই দুই লটে চীনা প্রতিষ্ঠান সিআরসি (চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন) ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান তমা কনসট্রাকশন প্রকল্পের নির্মাণ কাজ পায়।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শনিবার সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা থেকে আকাশপথে রওনা হয়ে ১০টা ৪৫ মিনিটে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে বেলা ১১টায় কক্সবাজারের ঝিলংজায় আইকনিক রেল স্টেশনে আসেন।
নবনির্মিত দৃষ্টিনন্দন এই স্টেশনে পৌঁছালে শিল্পীদের একটি দল প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানায়। উদ্বোধনের আগে বর্তমান সরকারের সময়ে রেল যোগাযোগগের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজারের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, রেলপথ মন্ত্রণালয় বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব হুমায়ুন কবির, রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল হাসান, দোহাজারী কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণকাজের প্রকল্প পরিচালক মো. সুবক্তগীন, এশয়ি উন্নয়ন ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন জিন্টিং।
অতিথিদের বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি শুভেচ্ছা স্মারক উপহার দেওয়া হয় রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। এরপর বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ ও কক্সবাজার রেলস্টশনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কক্সবাজার রেল যোগাযোগের উদ্বোধনের পর আইকনিক রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট কাটেন প্রধানমন্ত্রী। পরে পতাকা উড়িয়ে হুইসেল বাজানোর মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয় এ রুটে ট্রেনের। লাল-সবুজ সেই ট্রেনে চড়েই রামু যান সরকারপ্রধান।
রামু থেকে প্রধানমন্ত্রী মহেশখালী যাবেন। সেখানে তিনি জনসভায় ভাষণ দেবেন। এ জনসভায় রামু, কক্সবাজার সদর, কুতুবদিয়া, চকরিয়াসহ জেলার প্রতিটি উপজেলা থেকে অন্তত ৩ লাখ মানুষ সমাগমের প্রস্তুতি নিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।
এ অঞ্চলে আরও উন্নত এবং বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলতে সরকার এই রেললাইন স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়। স্টেকহোল্ডাররা বলছেন, নতুন রেললাইনের মাধ্যমের পর্যটক ও ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সহজে ও সাশ্রয়ী উপায়ে কক্সবাজারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবেন।
এই রেললাইন উদ্বোধন ছাড়াও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা শনিবার মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরের ১৪.৩ কিলোমিটার চ্যানেলসহ ১৫টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং চারটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। জেলা প্রশাসকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এদিন প্রধানমন্ত্রী রেলওয়েসহ ১৫টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকার চারটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।