টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আওয়ামীলীগ সরকার। তৃতীয় মেয়াদে যারা মন্ত্রী হয়েছেন তারা ভাগ্যবান। এই মন্ত্রিসভার কোন বড় পরিবর্তনই হয়নি। মৃত্যুজনিত কারণে একজন মন্ত্রীর পদ শূন্য হয়েছে, আর সামাজিক শিষ্টাচার লঙ্ঘনের কারণে একজন প্রতিমন্ত্রীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এবারের মন্ত্রিসভা একেবারেই পাঁচ বছরের চাকরি হিসেবে থেকেছে। প্রধানমন্ত্রী একজন মন্ত্রীকে কাজ করার সুযোগ দিতে চেয়েছেন। পাঁচ বছর তারা কিভাবে মন্ত্রণালয় পরিচালনা করে এবং দলের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে কতটুকু কাজ করে সেটির নিরীক্ষার জন্যই তিনি এটা করেছেন। বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে নির্বাচনের আগে মন্ত্রীসভার সদস্যদের আমলনামা নেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। তিনটি সংস্থার মাধ্যমে মন্ত্রীদের কর্মকান্ডের বিবরণীর রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সারা দেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মাঠ জরিপ করা হয়। এই মাঠ জরিপে বেশ কিছু মন্ত্রীর অবস্থা, মন্ত্রীর জনপ্রিয়তা নিম্নগামী বলে প্রাক্কলন করা হয়। এর প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীদের কাজকর্ম, তারা কতটুকু দায়িত্বশীল আচরণ করেছেন এবং তাদের অবস্থান কেমন ইত্যাদি নিয়ে এক ধরনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এই তথ্য সংগ্রহের প্রেক্ষিতেই প্রত্যেক মন্ত্রীর আলাদা আলাদা আমলনামা তৈরি হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রগুলো জানিয়েছে। এই আমলনামায় মন্ত্রীদের সম্পর্কে পাঁচটি বিষয় নেওয়া হয়েছে।
প্রথমত, এলাকায় মন্ত্রীদের অবস্থান কিরকম? গত নির্বাচনের পর থেকে এযাবত সময়ে তাদের জনপ্রিয়তা বেড়েছে না কমেছে? এলাকায় তারা কতটুকু যান? এলাকায় তারা যে প্রতিশ্রুতিগুলো নির্বাচনের সময় দিয়েছেন তার কতটুকু পূরণ করেছেন ইত্যাদি।
দ্বিতীয়ত, মন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রণালয়ে কাজের দক্ষতা। মন্ত্রী হিসেবে একজন মন্ত্রী তার মন্ত্রণালয়ের কাজে কতটুকু দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন, কিভাবে মন্ত্রণালয়ের কাজকর্মগুলো পরিচালনা করেছেন এবং বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তার পারঙ্গমতা কতটুকু এই সম্পর্কে তথ্য গ্রহণ করা হয়েছে।
তৃতীয়ত, মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি বা অন্যান্য ক্ষেত্রে কোনো অভিযোগ আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হয়েছে। মন্ত্রী থাকাকালীন অবস্থায় মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো সত্যতা কতটুকু, দুর্নীতির অভিযোগ গুলো সত্য কিনা, এই বিষয়গুলো যাচাই বাছাই করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।
চতুর্থত, মন্ত্রীরা এই সময়ের মধ্যে কি পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন বা তাদের পরিবারের সদস্যদের সম্পদ কি পরিমান বৃদ্ধি হয়েছে সে সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে এবং এই তথ্যগুলো মন্ত্রীদের আমলনামায় সন্নিবেশিত করা হয়েছে।
এবং সর্বশেষ দলের সঙ্গে মন্ত্রীদের সম্পর্ক কেমন, তিনি রাজনৈতিক কার্যালয়ে কতটুকু গেছেন, দলীয় কর্মকান্ডে কতটা অংশগ্রহণ করেছেন এবং দলীয় সিদ্ধান্ত বিশেষ করে নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে কতটুকু মনোযোগী ছিলেন, সে সম্পর্কেও খোঁজ খবর নেওয়া হয়েছে।
এই আমলনামাগুলোকে সমন্বিত করে একটি সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন এবং নির্বাচনকালীন সরকারে কোন মন্ত্রী থাকবেন না থাকবেন তা নির্ধারণের জন্যই এই আমলনামা নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।