জাপানের সদ্য প্রতিষ্ঠিত অফিসিয়াল সিকিউরিটি অ্যাসিসট্যান্স (ওএসএ) কাঠামোর প্রথম চারটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ নির্বাচিত হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি। শনিবার (২৬ আগস্ট) ঢাকার জাপান দূতাবাসে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ তথ্য জানান। জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুগান্তকারী টোকিও সফরের পর সামরিক সম্পর্ক আরও গভীর করার জন্য সদ্য প্রতিষ্ঠিত ওএসএর চারটি প্রার্থী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ নির্বাচিত হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় জাপান বাংলাদেশকে কতটা গুরুত্ব দেয়।
রাষ্ট্রদূত বলেন, শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য জাপান সশস্ত্র বাহিনী এবং সমমনা দেশগুলোর আঞ্চলিক সংগঠনের সুবিধার জন্য ওএসএ সহযোগিতা কাঠামো প্রতিষ্ঠা করেছে। তিনি বলেন, পাশাপাশি জাপান বাংলাদেশের সঙ্গে ‘প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি হস্তান্তর’-সংক্রান্ত একটি চুক্তির জন্য আলোচনা শুরু করেছে। আলোচনা ইতিবাচকভাবে চলছে। ২০২২ সালে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সুবিধার জন্য ‘অফিসিয়াল সিকিউরিটি অ্যাসিসট্যান্স’ নামে একটি নতুন সহযোগিতা কাঠামো তৈরি করে জাপান। যার মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট অন্য সংস্থাগুলোকে প্রয়োজনীয় উপকরণ এবং সরঞ্জাম প্রদানের পাশাপাশি দেশগুলোর নিরাপত্তার প্রয়োজনের ভিত্তিতে অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তা করে দেশটি।
প্যান এশিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পারি) আয়োজনে জাপান দূতাবাসে ‘বাংলাদেশ-জাপান কৌশলগত সম্পর্ক বাস্তবায়ন: কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ খবর জানানো হয়। গত এক দশকে বাংলাদেশ ও জাপানের সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটেছে। ২০১৪ সালে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সফরের সময় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ব্যাপক অংশীদারিত্বের স্তরে উন্নীত হয়েছিল। এ বছরের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের সময় অংশীদারত্ব কৌশলগত পর্যায়ে উন্নীত হয়। অর্থনৈতিক সহযোগিতা, সামরিক, সাংস্কৃতিক সহযোগিতা এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতা কৌশলগত অংশীদারিত্বের প্রধান উপাদান।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, কুষ্টিয়ায় জন্ম নেয়া বাঙালি বিচারপতি রাধা বিনোদ পাল বাংলাদেশ- জাপান সম্পর্কের ভিত্তি গড়েছিলেন। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষিতে ট্রায়ালে যে ভূমিকা রেখেছিলেন, সেটা এখনো জাপানি মানুষদের মনে আছে। এ ছাড়া ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় জাপানি শিক্ষার্থীরা টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য সহায়তা পাঠিয়েছিলেন, এটাও স্মরণযোগ্য। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালে জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের ঢাকা সফর ও ২০২৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে বিশেষ গতি এনেছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বেড়েছে। এই প্রথম বারের মতো দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চার বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।
শাহরিয়ার আলম বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার কানেকটিভিটি বা সংযোগ বাড়ানোর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এতে সহায়তা দিচ্ছে জাপান। বাংলাদেশ-জাপান আগামী দিনে এক সঙ্গে এগিয়ে যাবে বলেও প্রত্যাশা করেন তিনি।আলোচনা সভায় ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি বলেন, জাপান সশস্ত্র বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার সুবিধার জন্য একটি নতুন সহযোগিতা কাঠামো ‘অফিসিয়াল সিকিউরিটি অ্যাসিসটেন্স’ প্রতিষ্ঠা করেছে। এর আওতায় বিভিন্ন দেশের নিরাপত্তার প্রয়োজনের ভিত্তিতে অবকাঠামোগত উন্নয়নে উপকরণ ও সরঞ্জাম সরবরাহ করা হবে। আর এই ওএসএতে প্রথম চারটি দেশের মধ্যে নির্বাচিত বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি বছর জাপান সফর করেছেন। তার এই সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক পরবর্তী ধাপে আরও এগিয়ে যাবে। জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট করার লক্ষ্যে যৌথ সমীক্ষা চলছে। এটা হলে, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক-অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, জাপানি অর্থায়নে বাংলাদেশে বড় প্রকল্পগুলোর বিশেষ অগ্রগতি হয়েছে। এর মধ্যে আগামী অক্টোবরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল চালু হবে। এ ছাড়া মেট্রোরেল প্রকল্পের প্রথম ধাপ চালু হয়েছে। ঢাকা-নারিতা বিমান যোগাযোগও চালু হয়েছে। আলোচনা সভায় জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দীন আহমদের লিখিত বক্তব্য পাঠ করা হয়। তিনি বলেন, জাপান বাংলাদেশের বিশ্বস্ত বন্ধু। বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের দ্বিপক্ষীয় ছাড়াও দেশটির সঙ্গে বহুপক্ষীয় সম্পর্ক রয়েছে। এ ছাড়া আমাদের কৌশলগত সম্পর্কও শক্তিশালী হচ্ছে। আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন প্যান পারির প্রেসিডেন্ট ইউওজি আন্দো। পারির নির্বাহী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রমুখ।