বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশ এক অনন্য ঠিকানা হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যবসায়ীদের বড় পরিসরে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবার (২৩ আগস্ট) স্থানীয় সময় সকালে জোহানেসবার্গের একটি হোটেলে আয়োজিত ব্যবসায়িক সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) যৌথভাবে এর আয়োজন করে। এ সময় দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হওয়া প্রয়োজন জানিয়ে, প্রধানমন্ত্রী প্রবাসী বাংলাদেশিদের আফ্রিকানদের নিয়ে দেশে যৌথ বিনিয়োগের আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আফ্রিকার ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ও বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে আইসিটি, অবকাঠামো, ট্যুরিজম, ভারী ও হালকা শিল্পে বিনিয়োগ করতে পারেন। অবশ্যই এতে দুদেশই উপকৃত হবে। নীতিগতভাবে সব ধরনের সহায়তা দিতে বাংলাদেশ সরকার প্রস্তুত।’
বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা দুই দেশের বন্ধুত্ব ঐতিহাসিক। আমরা চাই দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রটির আরও প্রসার ঘটুক। দুই দেশের ব্যবসায়ীদের যৌথ বিনিয়োগে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গাঢ় হবে। এ ক্ষেত্রে আফ্রিকায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) জোহানেসবার্গ পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ও.আর. ট্যাম্বো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান দক্ষিণ আফ্রিকার সমবায় শাসন ও ঐতিহ্য বিষয়ক মন্ত্রী পার্কস টাও এবং দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নূর-ই-হেলাল সাইফুর রহমান। এ সময় গার্ড অব অনার দিয়ে সম্মান জানানো হয় বাংলাদেশের সরকার প্রধানকে। বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রেডিসন ব্লু হোটেল স্যান্ডটনে নিয়ে যাওয়া হয়। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরকালে তিনি সেখানেই অবস্থান করবেন। জোহানেসবার্গ সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার ছোটবোন শেখ রেহানাও রয়েছেন।
ব্রিকস সম্মেলনে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুরা দা সিলভা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। কোভিড-১৯ মহামারি ও এর কারণে বিশ্বব্যাপী ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার পর আয়োজিত এটি প্রথম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার ‘প্যালেস অব রেসিডেন্স’-এর রিভোনিয়া ৭ম তলায় আফ্রিকান দেশগুলোতে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতদের আয়োজন ‘বাংলাদেশ এনভয় কনফারেন্সে’ বক্তব্য দেবেন। বিকেলে হোটেল হিলটন স্যান্ডটনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের কথা রয়েছে। সন্ধ্যায় শেখ হাসিনা জোহাসেনবার্গের গ্যালাঘের এস্টেটে ব্রিকসের বর্তমান চেয়ার ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের আয়োজনে একটি সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নৈশভোজে যোগ দেবেন।
২৪ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী ‘ব্রিকস-ফ্রেন্ডস অব ব্রিকস লিডার্স ডায়লগ (ব্রিকস- আফ্রিকা আউটরিচ অ্যান্ড দ্য ব্রিকস প্লাস ডায়গল)-এ ‘নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অব ব্রিকস’-এর সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেবেন। সকাল ৯টায় ৭০টি দেশের প্রতিনিধির অংশগ্রহণে স্যান্ডস্ট্যান্ড কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠানটি শুরু হবে।
ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে শেখ হাসিনার একাধিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকও অনুষ্ঠিত হবে। এদিন তিনি কমিউনিটি নেতাদের একটি সভায়ও যোগ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী ২৬ আগস্ট স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের (ইকে৭৬২) ফ্লাইটে জোহানেসবার্গের ও আর টাম্বো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দেশের উদ্দেশে রওয়ানা দেবেন। তিনি দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতির পর, ২৭ আগস্ট সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।