জাতীয় পার্টিতে কি হচ্ছে? দিনভর জাতীয় পার্টিকে নিয়ে নানামুখী আলাপ-আলোচনা এবং জল্পনা-কল্পনা চলছে। জাপাকে নিয়ে কেউ কেউ কৌতুকও করছেন। অনেকে বলছেন, জাপায় এখন যা হচ্ছে তা হলো রীতিমতো সার্কাস।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এখন দেশে নেই। তিনি ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির আমন্ত্রণে এখন দিল্লি সফর করছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভারত ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করছেন। এর আগে ড. আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল ভারত সফর করে গেছেন। সেখানে দিল্লিতে বিজেপির সভাপতি সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এখন ভারত সফরে আছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। গতকাল তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন।
মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) সকালে একটি খবরে সবাই চমকে উঠে যে জিএম কাদেরকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে এবং রওশন এরশাদকে নতুন চেয়ারম্যান করা হয়েছে। কদিন আগেই গত ১৯ আগস্ট রওশন এরশাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎ করেন। ফলে এ ধরনের সংবাদের পর নানামুখী গুজব ছড়িয়ে পড়ে। একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় যে, আগামী সম্মেলন পর্যন্ত রওশন এরশাদই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এক বিবৃতিতে দাবি করেন যে, এটি একটি ফেইক নিউজ। এরকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এ ধরনের ঘটনার পিছনে কোন সত্যতা নেই বলেও মুজিবুল হক চুন্নু দাবি করেন।
তিনি এক বিবৃতিতে বলেন যে, এভাবে কারো জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগ নেই। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবার রওশন এরশাদের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। রওশন এরশাদের বিবৃতিতে বলা হয় যে আমি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান নই, দশম জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে আজ মঙ্গলবার সকালে জাতীয় পার্টির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান কথাটি ভুলবশত দলের চেয়ারম্যান হিসেবে চিঠি এসেছে। তিনি আরও বলেন, এটা ভুল হয়েছে। আমি সবাইকে বলে দিচ্ছি দলের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি সংশোধন করে নতুন করে পাঠানোর জন্য। এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই।
হঠাৎ করে জাতীয় পার্টিতে বিবৃতি, পাল্ট বিবৃতি, সংশোধনী কেন হচ্ছে এ নিয়ে বিভিন্নমুখী কথাবার্তা হচ্ছে। জিএম কাদেরকে নিয়ে কিছুদিন ধরেই জাতীয় পার্টির আওয়ামী লীগ মনোভাবাপন্ন অংশের মধ্যে অস্বস্তি এবং সংশয় রয়েছে। জিএম কাদের অনেকটাই বিএনপি মুখী হয়ে পড়েছেন এমন গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে। কেউ কেউ দাবি করেছেন যে জিএম কাদের শেষ পর্যন্ত বিএনপির পথে যেতে পারে। এমনকি নির্বাচন নিয়েও তিনি বিএনপির সুরে কথা বলেছেন। বর্তমান সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় এমন কথাও তিনি বলছেন। এর ফলে রওশন এরশাদের সমর্থক অংশরা মনে করছেন যে, ২০১৪ নির্বাচনের মতো জিএম কাদের কোন কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলতে পারেন। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছিল। কিন্তু রওশন এরশাদের শারীরিক অবস্থা এখন অনেক খারাপ। তিনি দলের নেতৃত্ব এবং দল চালানোর মত অবস্থায় আছে কিনা তা নিয়েও অনেকে সংশয় রয়েছে।
অনেকেই মনে করেছিলেন যে, জিএম কাদের যখন দিল্লিতে গেছেন তখন নিশ্চয়ই তিনি একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে আসবেন এবং সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতীয় পার্টির পরিচালিত হবে। কিন্তু একটি রাজনৈতিক দলের যে চেইন অফ কমান্ড ভেঙে পড়েছে তা আজকে নানা রকম বিবৃতি এবং ভুল-বিভ্রান্তির মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টিতে নানা স্রোতের যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত তা দলটিকে কোথায় নিয়ে যায় সেটাই দেখার বিষয়।