আগামী ২২ থেকে ২৪ আগস্ট দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে ব্রিকসের সম্মেলন। ব্রিকস তার পরিধি বাড়ানোর কথা বলেছিল। আর এই পরিধি বাড়াতে গিয়ে তারা বিভিন্ন দেশকে ব্রিকসের অন্তর্ভুক্ত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল। সেই ইচ্ছায় সাড়া দিয়ে বাংলাদেশসহ ২৩টি দেশ ব্রিকসের সদস্য হওয়ার জন্য আগ্রহ দেখিয়েছিল। এবার ব্রিকস সম্মেলনে এই সদস্যভূক্তির কথা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য একটি দুঃসংবাদ হলো ব্রিকস এবার নতুন সদস্য নবায়ন করছে না। নতুন সদস্য কাউকেই নেয়া হবে না।
রাশিয়া, চীন, ভারত, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকার এই জোট এখনই পশ্চিমাবিরোধী ফোরামে রূপান্তরিত হতে আগ্রহী নয় হলে বলে জানিয়েছে কোন কোন দেশ। আর এ কারণেই বাংলাদেশ সহ আরও ২৩টি দেশকে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। রাশিয়া এবং চীন চেয়েছিল ব্রিকসের পরিধি বৃদ্ধি করে এটিকে পশ্চিমাবিরোধী একটি জোট বিশেষ করে মার্কিন বিরোধী একটি অর্থনৈতিক জোট হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে। কিন্তু ভারত এবং ব্রাজিল তাতে সাড়া দেয়নি। এর ফলে বাংলাদেশ একটি বড় ধরনের ধাক্কা খেল কি না তা নিয়ে কূটনৈতিক মহলে নানামুখী আলোচনা হচ্ছে।
এ নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। একটি মহল মনে করছে, ব্রিকসে এখন সদস্য না হওয়ার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর চাপ দেওয়ার আরও বেশি সুযোগ পাবে। যদি এই অর্থনৈতিক জোটে বাংলাদেশের সদস্যভূক্তি নিশ্চিত হতো সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ জোটে একটি শক্তিশালী অবস্থানে থাকত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বলয় থেকে সহজেই বেরিয়ে আসতে পারত। কিন্তু এখন যেহেতু বাংলাদেশ ব্রিকসের সদস্য হতে পারছে না তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগামী নির্বাচনের আগে তাদের চাপ অব্যাহত রাখার সুযোগ পাবে। তবে এর বিপরীতমুখী বক্তব্যও পাওয়া যাচ্ছে কূটনৈতিক মহল থেকে।
ব্রাজিল এবং ভারত ব্রিকসকে এখনই পশ্চিমা বিরোধী জোট হিসেবে পরিচিত করার ক্ষেত্রে অনাগ্রহী। তারা মনে করছে, এরকম একটি অর্থনৈতিক জোট হলে সেটি সকলের জন্যই ক্ষতিকর হবে। এর ফলে ভারত বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করল বলেই বিভিন্ন মহল মনে করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন এবং বাংলাদেশ নিয়ে যে দর কষাকষি চলছে তার অংশ হিসেবেই কি ভারত ব্রিকসে এই অবস্থান নিল?
ভারত বাংলাদেশ বিষয় নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি সমঝোতার চেষ্টা করছে এবং এ নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেছেন। আগামী সেপ্টেম্বরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর। ভারত ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাড়াবাড়ির ব্যাপারে তাদের অসন্তোষের কথা জানিয়েছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ নিয়ে সরাসরি বিরোধে না গিয়ে একটি কৌশলগত অবস্থান নিয়েছে ভারত। সে কারণেই ভারত এখন ব্রিকস থেকে বাংলাদেশকে দূরে রাখলো কিনা সে নিয়ে কূটনৈতিক মহল প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। কারণ শেষ পর্যন্ত যদি বাংলাদেশ ব্রিকসের সদস্য হতো তাহলে বাংলাদেশ অনেক বেশি চীন বলয়ে চলে যেত এবং চীন দ্বারা প্রভাবিত হতো। চীন এবং রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর আরও নানা ধরনের চাপ প্রয়োগ করতে পারত। সে ক্ষেত্রে সমঝোতার পথ বন্ধ হয়ে যেত। কাজেই বাংলাদেশ যেন এরকম চূড়ান্ত অবস্থানে এখনই না যেতে পারে সেজন্যই কি ভারত ব্রিকস থেকে বাংলাদেশকে দূরে রাখলো। তবে এই দূরে রাখার ফলে যেমন বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের আরও ঘনিষ্ঠ হওয়ার সম্ভাবনা কমে গেল তেমনি মার্কিন প্রভাব বলয় থেকে বাংলাদেশের মুক্তির সম্ভাবনাও আপাতত রোধ হলো। তবে ভারত যেহেতু বাংলাদেশের বিষয়টি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কথা বলছে কাজেই ব্রিকসের সম্প্রসারণ না করার ফলে ভারত যুক্তরাষ্ট্রকে বুঝাতে সক্ষম হল যে, এখন বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য ভারতই সবচেয়ে বড় বন্ধু।