আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার ফর্মুলা আবার রাজনীতির মাঠে। আবার একটি মহল শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য সরব হয়েছে। বিএনপি’র পক্ষ থেকে যে এক দফা দাবি আদায়ের কথা ঘোষণা করা হয়েছে, সে এক দফা দাবির মূল বক্তব্য হলো- শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হবে না, এই বক্তব্যের মধ্যে এক ধরনের অস্পষ্টতা রয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামী লীগের অন্য নেতার অধীনে কি নির্বাচন হবে?- এমন প্রশ্নের উত্তরে বিএনপি নেতারা নিরব। তারা এ নিয়ে কোনো কথা বলছেন না।
একাধিক সূত্র বলছে, বিএনপির এটি একটি কৌশলগত অবস্থান। তারা শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে সংবিধানের আওতায় কোনো ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী করা হলেও- তা মেনে নিবেন, এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন কূটনৈতিকপাড়ায়। আর তাই এ নিয়ে এক ধরনের চাঞ্চল্য এবং উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগের একটি অংশ আস্তে আস্তে এই এক দফার সঙ্গে যুক্ত হবে এবং শেখ হাসিনাকে মাইনাস করার ফর্মুলা আবার রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হবে বলেই কেউ কেউ মনে করছেন।
উল্লেখ্য যে, ২০০৭ সালে ১/১১-এর সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছিল। সেই সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদের সমর্থনে ড. ফখরুদ্দীনের নেতৃত্বে একটি অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় বসে। ওই সরকার দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি নির্বাচন না দিয়ে, বরং রাজনৈতিক সংস্কারের প্রস্তাব নিয়ে মাঠে নামে। আর এই রাজনৈতিক সংস্কারের প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অনতিবিলম্বে নির্বাচন দিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। এর ফলে তিনি আক্রান্ত হন। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অসত্য-মিথ্যা মামলা দিয়ে তাঁকে কারান্তরীণ করা হয়।
এ সময় আওয়ামী লীগের অন্তত চারজন নেতা সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপন করেন এবং তারা শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার প্রস্তাব সমর্থন করেন। এই চার নেতাই দুইবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে দুইবারের বেশি অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না- এমন প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। আর সেই প্রস্তাবের আলোকেই আওয়ামী লীগকে বিভক্ত করার একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের তৃণমূলের তীব্র আপত্তি এবং প্রতিবাদের মুখে শেষ পর্যন্ত ৪ সিনিয়র নেতার এ মাইনাস ফর্মুলা বা সংস্কার প্রস্তাব ভেস্তে যায়। এতোদিন পর রাজনীতিতে আবার সে সংস্কার প্রস্তাব ফিরে এসেছে।
বিএনপি বলছে, তারা নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করবে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যা কিছু হবে সংবিধানের আওতায় করতে হবে। আর হঠাৎ করেই বিএনপি শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন নয়- এমন একটি বক্তব্য সামনে নিয়ে এসেছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতা, যিনি ১/১১-এর সময়ে সংস্কারপন্থি ছিলেন। তিনি সম্প্রতি বলেছেন, সংবিধানের আওতায় একটা সমাধানের জন্য আমরা আলোচনায় প্রস্তুত। যেখানে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিএনপির সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা হবে না। সেখানে এই নেতা, এর আগেও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এখন আবার তিনি নতুন করে সংবিধান সম্মতভাবে সংলাপের প্রস্তাব দিচ্ছেন। তাহলে কি আওয়ামী লীগেরও একটা অংশ শেখ হাসিনাকে আবার মাইনাস করার ষড়যন্ত্রের অংশীদার হতে যাচ্ছে?- এটি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন চলছে নানামুখী আলাপ-আলোচনা।