বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিপরীতমুখী অবস্থানে চলে গেছে দুই প্রভাবশালী দেশ ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল ভারতের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশের নির্বাচন যেন যথা সময়ে অনুষ্ঠিত হয়। আর এর প্রেক্ষিতে মনে হচ্ছে যে, ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ নিয়ে যে সমঝোতায় পৌঁছাতে চেয়েছিল, সে সমঝোতার ইতিবাচক অগ্রগতি হয়নি। সমঝোতা সফল না হওয়ার প্রেক্ষিতে ভারত এখন বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে তার নিজস্ব অবস্থান এবং কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, বাংলাদেশের নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক। এই নির্বাচনের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের একের পর এক শর্ত এবং পদক্ষেপ ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে।
গতকাল ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখপাত্র অরিন্দম বাকচী। তিনি সুস্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, ভারত সরকারের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কি চলছে, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা সমীচীন নয়। তিনি এটিও বলেছেন যে, ভারত মনে করে বাংলাদেশের নির্ধারিত সময়ে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই বক্তব্যটি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র দিলেন উচ্চ পর্যায়ের আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দলের ভারত সফরের পর পরই। এ থেকে বুঝা যাচ্ছে, ভারত বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে তার আগের অবস্থানে আছেন এবং এই অবস্থান বাস্তবায়নের জন্য তারা সচেষ্ট থাকবেন।
উল্লেখ্য যে, ভারত মনে করে যে বাংলাদেশের নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হওয়া উচিত। এ নির্বাচনে কোন দল অংশগ্রহণ করলো, না করলো- সেটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আর এই বিষয়টি বোঝানোর জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও আলোচনা করেছিলেন। কিন্তু এই আলোচনার পরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাবের মধ্যে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি। যে কারণে এখন ভারত তার নিজস্ব কৌশল দিয়েই বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাদের প্রভাব অব্যাহত রাখবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অতীতে ভারতের সঙ্গে অভিন্ন বাংলাদেশ নীতি গ্রহণ করলেও এবার তাদের অবস্থান দেখা যাচ্ছে সম্পূর্ণ ভিন্ন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্নমুখী তৎপটরতা গ্রহণ করেছে। এই সমস্ত তৎপরতার ফলে সুস্পষ্টভাবে একটি বিষয় প্রমাণিত হয়েছে, যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করে, সেই নির্বাচন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। এরকম বাস্তবতায় যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের বিপরীতমুখী অবস্থান, বাংলাদেশের রাজনীতিতে কি প্রভাব ফেলবে- সেটি দেখার বিষয়। তবে বিভিন্ন কূটনৈতিক মহল মনে করছেন, এখনো নির্বাচনের জন্য তিন মাসের বেশি সময় বাকি রয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী আগামী ৮ সেপ্টেম্বর ভারত সফরে যাচ্ছেন। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর আনুষ্ঠানিক বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। এছাড়াও আগামী দুই মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশে আসবে। সবকিছু মিলিয়ে কূটনৈতিক মেরুকরণের এখনও অনেক কিছুই বাকি রয়েছে। শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত বাংলাদেশের ব্যাপারে একটি অভিন্ন মনোভাবে আসবেন, এ ব্যাপারে অনেক কূটনীতিক মোটামুটি নিশ্চিত।
কারণ তারা মনে করেন, উপমহাদেশে যদি শেষ পর্যন্ত ভারতের সাথে বাংলাদেশ নিয়ে দ্বৈরথে জড়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তাহলে শেষ বিচারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই রকম একটি ক্ষতির শিকার যুক্তরাষ্ট্র কখনো হতে চাইবে না। অন্যদিকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রতিহত করা, বাংলাদেশে মৌলবাদের উত্থান ঠেকানোর জন্য ভারত বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে সবটুকু প্রচেষ্টাই করবে। শেষ বিচারে তাই ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক লড়াইয়ে কে জয়ী হয়- সেটি বাংলাদেশের নির্বাচনের উপর একটি বড় প্রভাব ফেলবে বলেই কূটনৈতিক মহল মনে করেন।