কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকে হত্যার প্রতিবাদে সেখানে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। আধিপত্য নিয়ে বিরোধের জেরে সেখানে হামলা হয়েছে, আগুন, অবরোধের ঘটনাও ঘটেছে। পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক সঞ্জয় কুমার প্রামাণিককে হত্যার পর এ রকম বিস্ফোরন্মুখ পরিস্থিতির তৈরি হয়। সেখানে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাসদের সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফের কুষ্টিয়াকেন্দ্রীক বিরোধ দীর্ঘ দিনের। ২০০৮’র নির্বাচনে হানিফকে বাদ দিয়ে কুষ্টিয়ায় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল ইনুকে। তার পর থেকেই দুই নেতার বিরোধ এলাকার একটি নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার। সামনের নির্বাচনে এই বিরোধ মীমাংসা না করলে- এই ধরনের সহিংসতার ঘটনা আরও ঘটবে এবং এর মাশুল দিতে হবে আওয়ামী লীগকেই -এমনটাই মনে করছেন আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলের অনেক নেতা।
মাদারিপুরে শাহজাহান খান বনাম বাহাউদ্দিন নাসিম। মাদারিপুরে শাহজাহান খান বনাম বাহাউদ্দিন নাসিমের বিরোধ নতুন কোনো বিষয় নয়। প্রধানমন্ত্রীর সামনেই এই দুই নেতা বিরোধে জড়িয়েছিলেন প্রকাশ্যে। তাদের এই বিরোধ এখন মাদারিপুরের রাজনীতিতে বড় মাথাব্যাথার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচনের আগে এই বিরোধ মীমাংসা না হলে, পুরো মাদারিপুরেই আওয়ামী লীগের জন্য এক বেদনাদায়ক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
ডা: দীপুমনি এবং সুজীত রায় নন্দী, চাঁদপুর। চাঁদপুরে শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনির সঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুজীত রায় নন্দীর বিরোধ এখন আর কোনো লুকোচুরির বিষয় নয়। বরং এই বিরোধের কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগও বিভক্ত হয়ে পড়েছে। সামনের দিনগুলোতে এই বিরোধ মীমাংসা না করতে পারলে- তা আওয়ামী লীগের জন্য ভয়ের কারণ তৈরি করতে পারে।
ড. সেলিম এবং মহিউদ্দিন খান আলমগীর, চাঁদপুর। চাঁদপুরে শুধু ডা: দীপু মনি এবং সুজীত রায় নন্দীর বিরোধই নয়, পুরো চাঁদপুরই আওয়ামী লীগের জন্য একটি বিরোধপূর্ণ উত্তপ্ত এলাকায় তৈরি হয়েছে। এখানে আরেকটি বিরোধের জায়গা হলো আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীরের সঙ্গে আওয়ামী লীগের উঠতি নেতা তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদের। দু’জনের বিরোধের কারণে এখানে আওয়ামী লীগও বিভক্ত। দু’জনই পাল্টাপাল্টি বক্তব্য রাখেন এবং দুই নেতার কর্মীদের প্রধান কাজ হলো অন্য নেতার বিরুদ্ধে কথাবার্তা বলা।
মোফাজ্জাল হোসেন চৌধুরী মায়া এবং ড. শামসুল আলম। চাঁদপুরের আরেকটি আসনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জাল হোসেন চৌধুরী মায়ার সাথে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলমের বিরোধ ভিন্ন রূপ ধারন করেছে। মোফাজ্জাল হোসেন চৌধুরী মায়া গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। এবার নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন লাভে আগ্রহী। অন্যদিকে সচিব থেকে অবসর গ্রহণের পর পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন ড. শামসুল আলম। তিনি এখন এলাকায় ঘন ঘন যাচ্ছেন এবং প্রায়ই তার সাথে মোফাজ্জাল হোসেন চৌধুরী মায়া গ্রুপের বিরোধ তৈরি হয়। যদিও এই বিরোধ এখন পর্যন্ত প্রকাশ্য রূপ লাভ করেনি। কিন্তু এই বিরোধ বিস্ফোরণে রূপ নিতে বেশি সময় নিবে না। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে যে কোনো সময় এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
তাপস এবং খোকন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, আর অন্যদিকে সাবেক মেয়র আর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা সাঈদ খোকনের বিরোধও আওয়ামী লীগের জন্য এক বড় মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা দক্ষিণ অঞ্চলের এলাকাগুলোতে এই বিরোধ এখন প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। নির্বাচনের আগে এই বিরোধ মীমাংসা না করতে পারলে, দুই পক্ষের জন্যই তা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
এরকম অনেকগুলো জেলাতে আওয়ামী লীগের নেতায় নেতায় বিরোধ এখন প্রকাশ্য। এমনকি আওয়ামী লীগ সভাপতির সামনেও অনেকে এই বিরোধ নিয়ে কথা বলেছেন। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো, এই সমস্ত বিরোধ মীমাংসা করা।