আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর নানা ধরনের চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছে। আর চাপ প্রয়োগের সর্বশেষ ইস্যু হল দুর্নীতি। আজ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বৈশ্বিক দুর্নীতি বিষয়ক সমন্বয় রিচার্ড নেফিউ ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন। ঢাকায় এসেই তিনি তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের যান এবং দুদক সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বৈশ্বিক দুর্নীতি দমন বিষয়ক সমন্বয়কের কাজ হচ্ছে অর্থ পাচার রোধ এবং দুর্নীতি দমন করা। গতবছর বৈশ্বিক দুর্নীতি দমন বিষয়ক সমন্বয়কের দায়িত্ব গ্রহণের পর বিভিন্ন অঞ্চলে সফর করেন রিচার্ড নেফিউ। দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের সফরের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ তার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় এ সফর বলে জানানো হয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, বর্তমান সরকারকে চাপে ফেলার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর আগে সুশাসন, মানবাধিকার সহ বিভিন্ন ইস্যুকে সামনে এসেছিল। মানবাধিকারের ইস্যু নিয়ে গত ১০ ডিসেম্বর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ডিজিটাল নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়কে সামনে নিয়ে আসা হয়। এছাড়াও সুশাসন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের ব্যাপারে সরব রয়েছে। এর সাথে যুক্ত হল দুর্নীতি বিষয়।
সূত্রগুলো বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের আর্থিক খাতে নানা অনিয়ম যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় ইস্যুতে তৈরি হয়েছে। সরকারকে চাপে ফেলার জন্য অর্থ পাচার সহ বিভিন্ন বিষয়গুলোকে তারা আলোচনায় আনতে চাইছে। তবে সূত্রগুলো বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিদের পাচারকৃত অর্থ এবং সেখানে পাচারকৃত অর্থের বিনিয়োগ আগের চেয়ে বেড়েছে। এই বাস্তবতায় রিচার্ড নেফিউ বাংলাদেশে এসেছেন এবং অর্থ পাচার রোধে সরকার কি করছে সে ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়ার চেষ্টা করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সাম্প্রতিক সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা বাংলাদেশে এসেছে। আবার সুইস ব্যাংক থেকেও বিপুল পরিমাণ অর্থ সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এ সবই পাচারকৃত অর্থ এবং যারা অর্থপাচার করেছেন তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ রাখা নিরাপদ মনে করছেন না এ কারণে পাচারকৃত অর্থ কেউ কেউ দেশে ফেরত পাঠিয়েছেন। তবে অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, ফেরত পাঠানো অর্থের পরিমাণ খুবই কম। মূল অর্থ গেছে দুবাই সহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। একইভাবে সুইস ব্যাংক থেকে উত্তোলিত অর্থ নিরাপদ ঠিকানা দুবাই, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ায় গেছে। এ সম্পর্কে যাবতীয় তথ্যাদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আছে। তারা এই বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী এবং অর্থনৈতিক সুশাসন নিশ্চিত করাটাও গণতন্ত্রের জন্য জরুরী এমন একটি নীতিগত অবস্থান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, নির্বাচনের আগে সরকারকে চাপে ফেলার কৌশল হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান তৎপরতা। আর বাংলাদেশ নিয়ে তাদের সর্বশেষ ইস্যু হল দুর্নীতি। এই ইস্যুটি যেহেতু ব্যাপকভাবে আলোচিত এবং সাধারণ মানুষের মধ্যেও দুর্নীতি নিয়ে নানা রকম কথাবার্তা হচ্ছে সেজন্য এটি নিয়ে কৌশলগত কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহজেই একটা ভালো অবস্থানে থাকতে পারবে। তাই দুর্নীতির ইস্যুটিকে এখন সামনে আনা হয়েছে। এখন দেখার বিষয় তিন দিনের সফরে রিচার্ড নেফিউ কি বক্তব্য করেন এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে কি ধরনের বার্তা দেন।