এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে গত ২১ দিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালনের পর মঙ্গলবার কাফনের কাপড় গায়ে জড়িয়ে আমরণ অনশন শুরু করেছিলেন মাধ্যমিকের শিক্ষকরা। তবে রাতে সংশ্লিষ্টদের আশ্বাসে অনশন স্থগিত করেছেন তারা। বুধবার থেকে তারা শ্রেণিকক্ষে ফিরছেন। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার আহমেদ।
এর আগে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে শিক্ষকদের এ অনশন কর্মসূচি শুরু হয়। শোকের মাস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কালো ব্যাজ পরে অনশন করেন শিক্ষকরা। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) ব্যানারে চলে এ আন্দোলন।
এ বিষয়ে বিটিএর সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পাঁচ মিনিটের জন্য দেখা করতে চাই। দেখা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অনশন চলবে। এতে যদি আমাদের মৃত্যু হয়, হোক; তবুও অনশন বন্ধ হবে না। ‘আমাদের আন্দোলনে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদেরও সমর্থন রয়েছে। কারণ, জাতীয়করণ হলে সবাই উপকৃত হবে।’ সকাল ৮টার পর থেকেই শিক্ষকরা জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকেন। সকাল ১০টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও দোয়া-মোনাজাতের মাধ্যমে কর্মসূচি শুরু হয়।
শিক্ষকদের অবস্থানের কারণে পুরানা পল্টন থেকে হাইকোর্ট অভিমুখী সড়কের কদম ফোয়ারা পর্যন্ত রাস্তার একপাশ বন্ধ হয়ে যায়। এসময় বৃষ্টি মাথায় নিয়েও অনশন চালিয়ে গেছেন শিক্ষকরা। জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষকদের বক্তব্য-স্লোগানে সারাদিন মুখরিত ছিল প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণ।
তবে সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা কবির বিন আনোয়ারের আমন্ত্রণে আওয়ামী লীগের ধানমণ্ডির কার্যালয়ে যান শিক্ষক নেতারা। রাত ৮টার দিকে সভায় বসেন তারা। সভায় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক উপকমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে শেখ কাওছার বলেন, ‘আমাদের মূল দাবি ছিল সরকারি-বেসরকারি স্কুলের মধ্যে যে বৈষম্য রয়েছে, সেটি দূর করতে হবে।
‘আজকের সভায় সরকারি-বেসরকারি স্কুলের বৈষম্য দূর করার বিষয়ে সবাই একমত পোষণ করেছেন। জাতীয়করণের দাবির বিষয়ে সরকার যে দুটি কমিটি করেছে, সেখানে শিক্ষক প্রতিনিধিদের রাখার কথা বলা হয়েছে। এটি আমাদের জন্য সুখবর।’ কমিটিতে শিক্ষক প্রতিনিধি থাকা মানে জাতীয়করণের কাজ এগিয়ে যাওয়া বলে জানান বিটিএর এ কর্মকর্তা।
বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে গত ১১ জুলাই থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন শিক্ষকরা। আন্দোলনের ২১তম দিন সোমবার (৩১ জুলাই) তারা আমরণ অনশন করার ঘোষণা দেন। মঙ্গলবার শোকের মাসের শুরুর দিন থেকে কাফনের কাপড় পরে আমরণ অনশন শুরু করেন শিক্ষকরা।
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা এ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তবে শিক্ষা উপমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে দাবি পূরণের সেই ‘আশ্বাস’ পাওয়ায় ক্লাসের ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।