প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে একটি গোষ্ঠী ইসলামের নামে রাজনীতি করে। কিন্তু ধর্মীয় কাজে তাদের কোনো আন্তরিকতা ছিল না। যা ছিল শুধু দেখানো। ধর্ম প্রচার-প্রসারে কেউ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। পঞ্চম পর্যায়ে নির্মিত ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে রোববার তিনি ওই কথা বলেন। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় ধর্মের ব্যবহার এবং অপব্যাখ্যা রোধে মুসল্লি, ইমাম-মোয়াজ্জিনদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সমাজে বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম হয়। এগুলো থেকে মানুষ যেন বিরত থাকে সে জন্য আপনাদের (ইমাম) খুতবায় সচেতন করবেন। যেমন, বাল্যবিবাহ রোধ করা, শিক্ষার প্রতি যেন সবাই আন্তরিক হয়, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কারও ছেলে-মেয়ে যেন সম্পৃক্ত না হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইসলামের নামে জঙ্গি কার্যক্রম করে ইসলামের সুনাম নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে। মুষ্টিমেয় কয়েকটি মানুষের জন্য আমাদের পবিত্র ধর্ম বিশ্বের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে, সেটা যেন না হয়। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস আমাদের জিরো টলারেন্স। কোনোভাবে আমরা তা সহ্য করব না।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘৯৬ সালে আমি সরকার গঠন করে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিজস্ব ১০ তলা ভবন নির্মাণ করে দেই। মাত্র ৩৪টি জেলায় অফিস ছিল। আমি সরকারে আসার পর প্রতিটি জেলায় ইসলামী ফাউন্ডেশনের জন্য অফিসের ব্যবস্থা করে দেই এবং কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি যখন বায়তুল মোকাররম মসজিদকে উন্নত করার জন্য প্রকল্প নিলাম, কাজ শুরু করলাম, সেখানে আমাদের নারী-পুরুষদের নামাজের সুব্যবস্থা, অজুখানা থেকে শুরু করে গাড়ি পার্কিংয়ের সুব্যবস্থা, মিনার তৈরি করে দিচ্ছি, তখন ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে এ মসজিদের কাজ বন্ধ করে দেন। আমরা যতটুকু কাজ করেছিলাম ততটুকু পড়ে থাকে। এটি অত্যন্ত দুঃখদায়ক একটা ঘটনা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আট বছর পর আমরা ক্ষমতায় এসে বায়তুল মোকাররম মসজিদকে আবার পুনর্নির্মাণ করে উদ্বোধন করি। এখানে আমাদেরকে সৌদি সরকারও সহায়তা করে। শুধু বায়তুল মোকাররম মসজিদ না, ক্যান্টনমেন্টে একটি বড় মসজিদের কাজ শুরু করছিলাম, তখন খালেদা জিয়ার বক্তব্য ছিল এত বড় মসজিদে কে যাবে নামাজ পড়তে? মিনারগুলো তৈরি করতে দেয়নি। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে মসজিদটা নির্মাণ করি।’
বিএনপির সাম্প্রতিক কর্মসূচি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তাদের চরিত্র তো জানেন, তারা অগ্নিসন্ত্রাসী। গতকাল কতগুলো বাস পুড়িয়েছে। এর আগে জীবন্ত মানুষগুলোকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। তাদের ভয়ঙ্কর অগ্নিসন্ত্রাসী রূপ আবার দেখলাম। বাংলাদেশের যেন এ ধরনের সন্ত্রাসীরা ক্ষতি করতে না পারে, সে জন্য সবার কাছে আমার আহ্বান থাকল।’
সারা দেশে প্রধানমন্ত্রী এ পর্যন্ত ২৫০টি মসজিদ উদ্বোধন করেন। তিনি এর আগে ২০২১ সালের ১০ জুন, ২০২৩ সালের ১৬ জানুয়ারি, ১৬ মার্চ, ১৭ এপ্রিল এবং সর্বশেষ রোববার পঞ্চম ধাপে মসজিদ উদ্বোধন করেন। নির্মাণাধীন বাকি মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলোর কাজ ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।