আর সময় দিতে রাজি না বিএনপি। আজ ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে বিএনপি কোনো বিরতি দেয়নি। কোনো আল্টিমেটামও দেয়নি। আগামীকাল সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ঢাকার সব প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটির শীর্ষ নেতারা। এই কর্মসূচিকে বিএনপি অবস্থান কর্মসূচি বলতে রাজি নয়। তারা বলছে যে, ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশমুখগুলোতে তারা শান্তিপূর্ণ অবস্থান করবে। তবে স্পষ্টতই এটি ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির আদলেই পরিকল্পিত একটি কর্মসূচি। বিএনপি এখন নাম বদলে এমন সব কর্মসূচি গ্রহণ করতে চাইছে যে কর্মসূচিগুলো সরকারকে চাপে ফেলবে এবং দ্রুত দাবি আদায় করার পক্ষে কাজ করবে।
বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, আগামীকালের কর্মসূচি থেকেও তারা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে। লাগাতার কর্মসূচির মধ্যে থাকতে চায় ১৬ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন শীর্ষ নেতা বলেছেন, তারা সরকারকে আর সময় দিতে রাজি নয়। কারণ যত সময় দেয়া হবে তত সরকার নতুন নতুন করে পরিকল্পনা গ্রহণ করবে এবং আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথে এগোবে। এই সুযোগটি বিএনপি চায়না।
বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি নেতারা এখন ‘ডু অর ডাই’ কর্মসূচির দিকে এগুতে চাইছে যে কর্মসূচিতে হয় তারা নি:শেষ হয়ে যাবে অথবা তারা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হঠাতে পারবে। এ কারণে বিএনপি এখন কর্মসূচি গুলোকে আরও জোরালো এবং আগ্রাসী করবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, এমন সব কর্মসূচি সামনের দিনগুলোতে পরিচালনা করা হচ্ছে যে কর্মসূচি গুলোর মাধ্যমে সত্যিকারে সরকারের চাপে পড়বে। বিএনপি সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, আগামীকালের কর্মসূচির পর থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বিএনপি বিভিন্নভাবে লাগাতার কর্মসূচি পালন করবে এবং তাদের কর্মসূচির প্রধান লক্ষ্য হল ঢাকা। বিএনপি ঢাকার বাইরে তেমন কোনো কর্মসূচির পরিকল্পনা নিয়ে ভাবছে না। শুধুমাত্র সভা-সমাবেশ ইত্যাদি ছাড়া। ঢাকা বিএনপির কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হবে ঢাকা শহরকে অচল করে দেওয়া এবং জনজীবনের ওপর চাপ সৃষ্টি করা।
বিএনপি মনে করছে যে, সেপ্টেম্বরের মধ্যেই তাদের আন্দোলনের একটি দৃশ্যমান ফলাফল অর্জন করতে হবে। তা না হলে তাদের আন্দোলন সফল হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে রাজনৈতিক কিছু কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন যে আগস্ট মাস পর্যন্ত বিএনপির যে আন্দোলন সেই আন্দোলন একটি টেস্ট কেস। তারা আসলে দেখতে চায় যে এই আন্দোলনের মাধ্যমে তারা সরকারকে হঠাতে পারে কিনা। যদি আগস্টের মধ্যে তারা এ ধরনের কর্মসূচি পালন করে সরকারকে চাপে ফেলতে না পারে তাহলে তারা নির্বাচনমুখী হবে।
বিএনপির বিভিন্ন নেতারা জানিয়েছেন যে, আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও চলছে। বিভিন্ন সূত্র গুলো মনে করছে যে, আগস্ট পর্যন্ত বড় ধরনের আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করে বিএনপি সরকারের ওপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করতে চায় যেন সরকার কিছুটা হলেও অবাক সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে। যদিও তারা মুখে বলছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে তারা আন্দোলন করবে। কিন্তু বাস্তবে তারা একটি সম্মানজনক সমঝোতা গেলেই নির্বাচনে যাবে এবং এভাবেই তাদেরকে পরামর্শ দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। এই সময়ের মধ্যে তারা যদি সরকারকে কোণঠাসা করতে পারে তাহলে সরকার তাদের সাথে সংলাপ বা সমঝোতার বসবে। যত বেশি সরকারকে চাপে ফেলা সম্ভব হবে নির্বাচনের ব্যাপারে সরকার তত ছাড় দেবে বলে বিএনপি নেতারা মনে করছেন। আর এ কারণেই বিএনপির কর্মসূচিগুলো এখন অব্যাহত থাকবে এবং সামনের কটাদিন বিএনপির বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচিগুলো পালিত হবে। এ ধরনের কর্মসূচি সরকারকে কতটুকু চাপে ফেলবে সেটা পরের বিষয় কিন্তু এই কর্মসূচি যে জনগণের অবস্থা আরও দুর্বিষহ করবে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।