সকালে ছেলেকে স্কুলে দিয়ে বাজারে আসেন তানিয়া ইসলাম। রাজধানীর পল্লবী এলাকার মুসলিম বাজারের একটি মুদি দোকানে গিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় বেশ কয়েকটি পণ্য কেনেন। বিলের রসিদ হাতে পেয়েই দোকানদারকে তার জিজ্ঞাসা- সয়াবিন তেলে আগের দাম কেন? গত সপ্তাহে সয়াবিন তেলের দাম কমেছে শুনে কিছুটা আগ্রহ নিয়েই বাজারে এসেছেন তিনি। অথচ দোকানি দাম ধরেছেন আগেরটাই!
বাজারে যখন প্রায় সব পণ্যের দাম আকাশ-ছোঁয়া সেখানে দু-একটির দাম কমার খবরে কিছুটা হলেও স্বস্তি অনুভব করেছিলেন তিনি। অথচ ৫ লিটার সয়াবিন তেল সেই আগের ৯২০ টাকা দামেই কিনতে হলো তাকে, যা নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ দোকানির সঙ্গে চলল বাক-বিতণ্ডা।
দোকানদারের দাবি, দাম কমার ঘোষণা দেয়া হয়েছে ঠিকই, তবে এখনও নতুন দামের কোনো তেল তাদের হাতে আসেনি।
বিষয়টি বেশ হতবাক করে তানিয়া ইসলামকে। গণমাধ্যমকর্মী পরিচয় পেয়ে এই প্রতিবেদকের কাছে কিছুটা ক্ষোভ আর জিজ্ঞাসার সুরেই বললেন, ‘এই দেশে এগুলো দেখার যেন কেউ নেই! গত সপ্তাহে নিউজে দেখলাম সয়াবিন পাঁচ লিটার বিক্রি হবে ৮৭৩ টাকায়, কই সেই তেল?’
তানিয়ার অভিযোগ- কোনো পণ্যের দাম বৃদ্ধির ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে বেড়ে যায়। আর কমার সময়েই যত গড়িমসি দোকানদারদের। আর খুচরা বিক্রেতারা দিচ্ছেন পুরনো সেই অজুহাত, নতুন লেবেলিং করা সয়াবিন তেল এখনও পাননি তারা।
এমন বাকবিতণ্ডার চলার মাঝেই চোখে পড়ল পাশের দোকানে আরেক ক্রেতা খুঁজছেন দুই লিটার সয়াবিন তেলের বোতল। তার অভিযোগ, চার/পাঁচটি দোকানে ঘুরেও দেখা পাননি দুই লিটার সয়াবিনের। এক দোকানে পেলেও দাম চাওয়া হচ্ছে ৩৭৮ টাকা, অর্থাৎ সেই পুরনো দাম।
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রধান গেট সংলগ্ন কাঁচা বাজারেও একই চিত্র। বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরেও মোড়কজাত পাঁচ লিটার তেলের সন্ধানই পাওয়া গেল না। জানতে চাইলে এক দোকানি বললেন, ‘নতুন দামের কোনো তেল তারা এখনও পাইনি। তাই ক্রেতারা নতুন দামে তেল চাইলেও দিতে পারছি না। বাকবিতণ্ডা এড়াতে তাই তেল বিক্রিই কমিয়ে দিয়েছি।’
দোকানদারদের যুক্তি, তেল বিক্রি করে সবচেয়ে কম লাভ। তার ওপর দাম কমানোর ঘোষণা দিলেও ঠিক সময়ে তেল দিতে পারে না বড় কোম্পানিগুলো।
পাশেই এক দোকানে শীর্ষ একটি সয়াবিন ব্র্যান্ডের এক প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বললেন, ‘তাদের কোম্পানির কাছে এখনও পুরনো তেল মজুদ রয়েছে। তাই মিল থেকে নতুন দামের তেল আসছে না।’
কবে নাগাদ আসতে পারে এমন প্রশ্নে তার উত্তর, ‘আগামী সপ্তাহ থেকে মিলতে পারে, অবশ্য শতভাগ নিশ্চিত নই।’
যদিও এমন বাস্তবতাকে স্বীকার করছে না দেশের শীর্ষস্থানীয় তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপ। কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা নিউজবাংলার কাছে দাবি করেন, ‘ঘোষণার পরদিনই প্রতিটি বাজারে তেল বিতরণে তাদের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।’
বাজারে তেলের সংকট রয়েছে কিংবা নতুন দামে ক্রেতারা তেল পাচ্ছে না- এমন অভিযোগ বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে দাবি তার। বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘প্রতিটি বাজারে খোলা তেলের জোগান ঠিক রাখার চেষ্টা করছি আমরা।’
আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের দাম কমায় ১২ জুলাই দেশের বাজারেও দাম কমানোর ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। ঘোষণা অনুযায়ী বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১০ টাকা কমিয়ে ১৭৯ টাকা ও খোলা সয়াবিন তেল লিটার প্রতি ৮ টাকা কমিয়ে ১৫৯ টাকা বিক্রি হওয়ার কথা। এছাড়া ৫ লিটার সয়াবিন ৪৩ টাকা কমিয়ে ৮৭৩ টাকায় বিক্রির সিদ্ধান্তের কথা জানায় অ্যাসোসিয়েশন।