টি-টোয়েন্টিতে ভারতের বিপক্ষে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেও সিরিজ হেরেছিল বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। তবে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে শুরুতেই দাপুটে জয় পেল টিম টাইগ্রেস। সেই সঙ্গে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে ফরম্যাটে ভারতের বিপক্ষে জয়ের দেখা পেল তারা। মিরপুরের মাঠে বাংলাদেশের কাছে রীতিমতো অসহায় আত্মসমর্পণ করেছেন স্মৃতি-হারমানপ্রীতরা। মিরপুর শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে রোববার বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ভারতকে ৪০ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। এর ফলে তিন ম্যাচের সিরিজে স্বাগতিকরা এগিয়ে গেল ১-০ ব্যবধানে। রোববার (১৬ জুলাই) টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতির ৩৯ রানের পাশাপাশি ফারজানার ২৭ রানের সুবাদে কোনোরকমে দেড়শ পার করে বাংলাদেশ। বৃষ্টি বাধায় ৪৪ ওভারে নেমে আসা ম্যাচটিতে ১৫২ রানের বেশি সংগ্রহ করতে পারেনি স্বাগতিক ব্যাটাররা। এরপর মারুফা আক্তারের ৪ উইকেট এবং রাবেয়া খানের ৩ উইকেটের সুবাদে ভারতের ইনিংস ১১৩ রানে থামিয়ে দেয় স্বাগতিকরা। এর সঙ্গে সঙ্গে জয় উল্লাসে মাতে টিম টাইগ্রেস।
এবার নিয়ে ওয়ানডেতে ষষ্ঠ দেখায় ভারতের বিপক্ষে প্রথম জয় পেল বাংলাদেশ নারী দল। এ জয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা মারুফা আক্তারের। ৭ ওভারে ২৯ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন এই পেসার। ভারতের দুই ওপেনারকেই ফিরিয়ে জয়ের ভিত্তিটা গড়ে দিয়েছিলেন মাত্রই চতুর্থ ওয়ানডে খেলা মারুফা। ক্যারিয়ারের প্রথম তিন ওয়ানডেতে উইকেটশূন্য মারুফা তৃতীয় ওভারেই পেয়ে যান স্মৃতি মান্ধানার উইকেট। স্ল্যাশ করতে চেয়েছিলেন ভারতের তারকা ব্যাটার মান্ধানা। ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে বলটি শুধু বাংলাদেশের উইকেটকিপার নিগার সুলতানার দারুণ এক ক্যাচের শিকারই হতে পেরেছেন। ১৩ রানে প্রথম উইকেট হারানো ভারতীয়রা দ্বিতীয় উইকেট হারায় নবম ওভারে ৩০ রানে। মারুফার বলে ফ্লিক করতে গিয়ে মিড অনে মুরশিদা খাতুনের ক্যাচ হয়েছেন প্রিয়া পুর্নিয়া। এরপর দুই স্পিনার নাহিদা আক্তার ও রাবেয়া খাতুন হারমানপ্রীত কৌর, যষ্টিকা ভাটিয়া ও জেমিমা রদ্রিগেজকে ফিরিয়ে ভারতের স্কোরটাকে ৬১/৫ বানিয়ে দেন। এরপর আবার দৃশ্যপটে আগমন মারুফার। ২৯তম ওভারের পঞ্চম বলে আমনজোতকে অধিনায়ক নিগারের দ্বিতীয় শিকার বানিয়ে জুটি ভাঙেন ১৮ বছর বয়সী পেসার। ঠিক পরের বলেই স্নেহ রানাকে দারুণ এক ইনসুইঙ্গার ইয়র্কারে বোল্ড করে দেন মারুফা। পরের ওভারের প্রথম বলেও আরেকটি উইকেট হারায় ভারতীয়রা। এবার লেগ স্পিনার রাবেয়া ফিরিয়ে দেন দীপ্তিকে। ৩ বলের মধ্যেই ৫ উইকেটে ৯১ থেকে ৮ উইকেটে ৯১ ভারত! এরপর আর ২২ রানই যোগ করতে পারে সফরকারীরা।
৩৬তম ওভারের পঞ্চম বলে শেষ ব্যাটার বারেদি আনুশার রানআউটেই শেষ হয় দলটি ইনিংস। সুলতানা খাতুনের সরাসরি থ্রো ভেঙে দেয় উইকেট। টেলিভিশনে রিপ্লে দেখেই থার্ড আম্পায়ার আউট দিতেই ইতিহাস। ওয়ানডেতে প্রথম ভারত জয়। এর আগে, টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে পড়ে বাংলাদেশের মেয়েরা। দলীয় ১৪ রানেই ফিরে যান দুই ওপেনার মুর্শিদা খাতুন ও শারমিন আক্তার। এরপরেই দলের হাল ধরেন অধিনায়ক জ্যোতি এবং ফারজানা। দুজনের ৪৯ রানের জুটি ভাঙেন আমানজোত কৌর। ব্যক্তিগত ২৭ রানে ফেরেন ফারজানা। উইকেটে এসে সুবিধা করতে পারেননি রিতু মনি। আর দলীয় ১০৩ রানের মাথায় আমানজোতের বলেই এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে পড়েন অধিনায়ক জ্যোতি। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৯ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। জ্যোতির বিদায়ের পর বড় ইনিংস খেলতে পারেননি বাকিদের কেউই। শেষ দিকে ফাহিমার ২৯ বলে ১২ এবং সুলতানার ২০ বলে ১৬ রানের সুবাদে দেড়শ পার করে বাংলাদেশের মেয়েরা। ভারতের পক্ষে আমানজত কৌর নিয়েছেন ৪ উইকেট। ২ উইকেট পেয়েছেন দেবীকা বিদ্যা। এক উইকেট পেয়েছেন দীপ্তি শর্মা।