প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষের সেবা করার মধ্যে সব চেয়ে বড় পাওয়া এর চেয়ে বড় কিছু না। রাজনৈতিক নেতাদের জন্য সবচেয়ে এটাই বেশী প্রয়োজন। তিনি বলেন, আজ যাদেরকে (এমপিদের) হারিয়েছি, আর আজ যারা নতুন নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের প্রতি আবেদন থাকবে ‘যে আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, যে লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, সে স্বাধীনতার সুফল বাংলার মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া, এটাই আমাদের, আপনাদের একমাত্র লক্ষ্য।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ যারা মারা গেছেন, এরা সবাই ছিলেন জাতির পিতার একনিষ্ট কর্মী, আদর্শের কর্মী। আসলে আমাদের বহু নেতা কর্মী যাদের আমি হারিয়েছি, তারা যে সংগ্রাম- কষ্ট করে গেছেন, জেল জুলুম অত্যাচার সহ্য করেছেন। দেশ স্বাধীন হবার পরে ‘৭৫ এ জাতির পিতাকে হত্যার পরে এদের ওপর প্রচুর অত্যাচার নির্যাতন হয়েছে। রেবেকা মমিন, আব্দুল কুদ্দুস সবাই জনগণের জন্য কাজ করে গেছেন। রেবেকা মমিন তার প্রচুর সম্পত্তি আশ্রয়ণ প্রকল্প ছাড়াও জনগণের জন্য দান করে গেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আজ তিনি আমাদের মাঝে নেই। আমি তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই, জাতীয় চার নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। বিশ লাখ শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই, স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা অবদান রেখে গেছেন, আমাদের সংসদ সদস্য যারা চলে গেছেন। রবিবার একাদশ জাতীয় সংসদে নাটোর-৪ আসনের এমপি আব্দুল কুদ্দুস ও নেত্রকোনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেবেকা মমিনের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে। বিকালে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদ অধিবেশনের শুরুতে এ দুজন এমপির মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এসময় প্রয়াত সংসদ সদস্যদের জীবনী নিয়ে আলোচনা করেন এমপিরা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের বাংলাদেশকে আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করতে পেরেছি। কিন্তু আমাদেরকে উন্নত দেশে উন্নীত করতে হবে। সকলেই নিবেদিত প্রাণ হয়ে মানুষের সেবা করে যেতে হবে, এই আমি চাই। মানুষের সেবা করার মধ্যে সব চেয়ে বড় পাওয়া এর চেয়ে বড় কিছু না। রাজনৈতিক নেতাদের জন্য সবচেয়ে এটাই বেশী প্রয়োজন। আজ যারা প্রয়াত হয়েছেন তারা অবদান রেখে গেছেন, তার জন্য আমরা এতদূর আসতে পেরেছি। এটা মনে রাখতে হবে।
শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি সরকার গঠন করার পর থেকে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করেছি। আমাদের উন্নয়নের ধারা দেশের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এটা সম্ভব হয়েছে আমাদের এমপিরা প্রচণ্ড দ্বায়িত্বের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। শোক প্রস্তাবের ওপরে বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখ জনক, আমাদের পার্লামেন্ট শুরু করতে হয় শোক প্রস্তাব দিয়ে। আজ পর্যন্ত একাদশ জাতীয় সংসদে মোট ২৮ জন এমপি মারা গেছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ২৬ জন এবং জাতীয় পার্টির ২ জন এমপি। এসময় তিনি আব্দুল কুদ্দুস ও রেবেকা মমিনসহ মতিউর রহমানের স্মৃতি চারণ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেবেকা মমিন ছিলেন রাজশাহী বিশ্ব বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র নেত্রী, সে ছিল আমার পত্র বন্ধু। সে আমাকে চিঠি দিত, আমিও উত্তর দিতাম, সে তার চিঠি সব সময় বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা লিখতো। তার সঙ্গে আমার বিশেষ বন্ধুত্ব ছিলো। আমি যখন কলেজের ভিপি ছিলাম, সে তখন আমাকে অত্যান্ত উৎসাহ দিয়েছিল।
প্রয়াত এমপি আব্দুল কুদ্দসের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আব্দুল কুদ্দুস ছিলেন রাজশাহী বিশ্ব বিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ করতেন। তিনি অত্যন্ত সাহসী ছিলেন। যেখানে নাটোর একটা সন্ত্রাসী জায়গা, সেই সস্ত্রাসের জায়গায় তিনি বার বার জয়ী হয়েছেন, যদিও তাকে একবার জোর জবরদস্তি করে হারানো হয়েছিল, কিন্তু তিনি ছিলেন জনগণের নেতা। তার জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। মতিউর রহমান, যখন আমরা জোট করি তখন তিনি রওশন এরশাদকে তার সিটটা ছেড়ে দেন। কত বড় নেতা ছিলেন, যখন আমি তাকে বললাম আমরা জোট করবো, আপনাকে সিটটা ছাড়তে হবে, এক মিনিটও দেরি না করে তিনি তার আসন ছেড়ে দেন। প্রয়াত এমপি আব্দুল কুদ্দুস ও রেবেকা মমিনের মৃত্যুতে সংসদে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় আরো অংশ নেন সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান আমির হোসেন আম, তোফায়েল আহমেদ, বিরোধী দলের চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙা, সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, এমপি আব্দুল আজিজ, শফিকুল ইসলাম শিমুল, ওয়াসিকা আয়শা খান এবং সাজ্জাদুল হাসান।