ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণকে হঠাৎ করে অব্যাহতি দেয়ার ঘটনায় এখন বিএনপি এবং ছাত্রদলের মধ্যে তোলপাড় চলছে। পারিবারিক সূত্রে শ্রাবণ আওয়ামী লীগের রাজনীতির উত্তরাধিকার। তার পিতা আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তার পরিবারের অন্য সকল সদস্যই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।
সেরকম পরিবেশে বেড়ে উঠেও শ্রাবণ বিএনপি’র রাজনীতিতে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল এবং ছাত্রদলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। ছাত্রদলের এই সদ্য অব্যাহতি পাওয়া সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলামকে যারা চেনেন, তারা জানেন যে দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ, ত্যাগী, পরিশ্রমী একজন কর্মী ছিলেন শ্রাবণ। ১৩ বছর বাবা-মা’সহ পরিবারের সকলের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করেছিলেন শুধুমাত্র রাজনীতির জন্য। তার আদর্শ সঠিক নাকি ভুল সেটি ভিন্ন প্রশ্ন। কিন্তু রাজনীতির জন্য এরকম ত্যাগ স্বীকার এই যুগে খুব সচরাচর দেখা যায় না।
শ্রাবণের আরেকটি বড় বৈশিষ্ট ছিল, তিনি একজন সৎ রাজনীতিবিদ হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। মূলত কর্মীরাই তাকে চালাত। নিজের কোন আয় উপার্জন ছিল না। অন্য ছাত্রদলের নেতাদের যেমন বিপুল বিত্ত-বৈভব এবং অর্থ, তেমন কোনটাই ছিল না তার।
শ্রাবণের ঘনিষ্ঠ একজন বলেছেন, তিনি এক কর্মীর বাসায় রাত কাটাতেন, আরেক কর্মীর বাসায় খেতেন। এভাবেই তিনি তার রাজনীতিকে এগিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু বিএনপি’র রাজনীতিতে অনেকেই শ্রাবণকে বিশ্বাস করতে পারত না। তার পিতা যেহেতু আওয়ামী লীগ করে এবং তার পারিবারিক পরিচয় আওয়ামী লীগ এ জন্যই তাকে সবসময় ঘৃণা এবং অবিশ্বাসের চোখে দেখা হতো- এটা শ্রাবণ ভাল করেই জানতো। এ কারণেই তাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে বলে মনে করছেন বিএনপি এবং ছাত্রদলের অনেকে।
শুধু তাই নয়। বিভিন্ন সময় বিএনপিতে অনেক আওয়ামী লীগের নেতা যোগ দিয়েছিলেন। এক সময় আওয়ামী লীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে বিএনপিতে যোগ দেন। এখন তিনি বিএনপিতে অপাংক্তেয়। চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হিসেবে একটি গুরুত্বহীন পদ নিয়ে তিনি টক-শো’তে চিৎকার করে বেড়ান।
অন্যদিকের আওয়ামী লীগের আরেকজন তুখোড় নেতা ফজলুর রহমানও বিএনপিতে লাপাত্তা এবং গুরুত্বহীন। আওয়ামী লীগের লোকজনকে বিএনপি কখনোই বিশ্বাস করে না এবং সব সময় তারা মনে করে যে, এরা বিএনপি বা ছাত্রদল করলেও হৃদয়ে আওয়ামী লীগ। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগের লোকজন বিএনপিতে বা ছাত্রদলে গিয়ে কখনও টিকতে পারে না। তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো শ্রাবণ।
তারেক জিয়া এখন রাজনীতিকে পণ্য বানিয়ে ফেলেছেন। বিভিন্ন পদ পদবী দেয়া হয় মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে। রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ কোন সময় অর্থকরী দিতে পারতেন না। তার সেই আর্থিক অবস্থাও নেই। আর সে কারণেই কি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে শ্রাবণকে সরিয়ে দিয়ে রাশেদ ইকবালকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হলো? নতুন যাকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়েছে, তিনি ধনাঢ্য এবং তার বিরুদ্ধে একাধিক চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের মামলা রয়েছে। আর এ কারণেই অনেকে মনে করেন শ্রাবণকে সরিয়ে দেয়ার পেছনে বিএনপি’র যেমন আওয়ামী লীগ ভীতি কাজ করেছে, তেমনি তারেক জিয়ার অর্থ আদায়ও এখানে একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। কারণ তারেক জিয়া এখন টাকা ছাড়া কমিটি করছে না।
রাশেদ ইকবাল খান সম্পর্কে যে তথ্যগুলো পাওয়া গেছে,তিনি ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হবার আগে তারেক জিয়ার সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেছেন এবং এখানে একটি আর্থিক লেনদেন হতে পারে। শ্রাবণের এই ঘটনায় বিএনপি’র মধ্যে যে আওয়ামী ফোবিয়া কাজ করেছে এটি পরিষ্কার।