রাজধানীতে ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-জামায়াতের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে যেকোনো ধরনের সংঘাত এড়াতে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মাঠে রয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। প্রয়োজনে মাঠে নামতে প্রস্তুতি রয়েছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ও আনসার সদস্যদেরও।
রাজধানীর সড়কে চেকপোস্ট জোরদারের পাশাপাশি আবাসিক হোটেল ও সন্দেহজনক জায়গায় নজরদারি শুরু হয়েছে। ঢাকায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি আশপাশের জেলাগুলোতেও সতর্ক অবস্থানে থেকে তল্লাশি কার্যক্রম চালাচ্ছে পুলিশ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নিরাপত্তা সহায়তা দিতে প্রস্তুতি রয়েছে পুলিশের। কিন্তু সমাবেশ ঘিরে যেকোনো বিশৃঙ্খলা এড়াতে সর্বোচ্চ পেশাদারত্বের সঙ্গে কঠোর থাকবে তারা। এরই অংশ হিসেবে রাজধানীজুড়ে নিরাপত্তা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
একইদিনে পাল্টাপাল্টি রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে আইনশৃঙ্খলার অবনতি করতে পারেন, এমন ব্যক্তিদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলেও জানান তারা।
কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে, যাতে বাইরে থেকে এসে কেউ কোনো ধরনের নাশকতা সৃষ্টি করতে না পারেন।
ডিএমপির একাধিক কর্মকর্তা জানান, লিখিত নির্দেশ না দিলেও ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ডিএমপির সদস্যদের ছুটি না নিতে মৌখিকভাবে বলা হয়েছে। তা ছাড়া সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, এখনো বিএনপি সমাবেশের অনুমতি না পেলেও এরই মধ্যে বিভিন্ন জেলা থেকে দলটির নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন। আবার অনেকে ইতোমধ্যে চলে এসেছেন। তবে এর আগে, বিভিন্ন সময়ে তারা নয়াপল্টনের আশপাশের আবাসিক হোটেলগুলোতে অবস্থান করলেও এবার তারা বিভিন্ন স্বজনদের বাসাবাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন।
২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি এবং বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগ সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে ডিএমপি কমিশনারের কাছে আবেদন করেছে। চিঠি চালাচালির পর দুই দলের পছন্দের জায়গায় সমাবেশ করতে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে ডিএমপি সূত্র জানিয়েছে।
জানা গেছে, পুলিশের বিভিন্ন শর্তসাপেক্ষে তাদের এ অনুমতি দেয়া হতে পারে। তবে বিশৃঙ্খলা করলে পুলিশ সর্বোচ্চ কঠোর হবে। শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে ডিএমপির পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা রয়েছে।
তবে ২৮ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামী শাপলা চত্বরে সমাবেশের আবেদন করলেও তাদের বিষয়ে জিরো টলারেন্স দেখানোর কথা জানিয়েছে পুলিশ। সংগঠনটিকে কোনোভাবেই পুলিশ মাঠে নামতে দেবে না।
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, মহাসমাবেশ ঘিরে এখন পর্যন্ত নাশকতার হুমকির কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। তবে থ্রেট যে আসবে না, সেটা তো বলতে পারছি না। আমাদের গোয়েন্দা ইউনিটগুলো কাজ করছে। প্রতিটি ঘটনার সময় আমরা পর্যালোচনা করছি।
জামায়াতে ইসলামীর বিষয়ে তিনি বলেন, জামায়াতের বিষয়ে ডিএমপির অবস্থান লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার। জামায়াতকে ঢাকা শহরের কোথাও সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হবে না। জামায়াত স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত দল। দলটির নিবন্ধন হাইকোর্টের নির্দেশে নির্বাচন কমিশন বাতিল করেছে। সুতরাং জামায়াতকে কোনো ধরনের স্পেস দেয়ার সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, জামায়াত কোনো স্পেস পাবে না। তাদের বিষয়ে সহযোগিতা নয়, শূন্য সহিষ্ণুতার (জিরো টলারেন্স) নীতি। এরপরও যদি তারা অনুমতি ছাড়া সমাবেশ করতে চায়, তাহলে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। জামায়াতের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে তাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, এটি মিথ্যা কথা। কোনো রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ ঘিরে ডিএমপি কাউকে গ্রেপ্তার করে না। আমাদের ক্রাইম ডিভিশনের প্রতিটি থানার ওসি ও ডিসিকে বলা আছে, যারা ওয়ারেন্টের আসামি, সন্দেহজনক আসামি, মামলা বা তদন্তভুক্ত আসামি, নাশকতা হতে পারে এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাদের গ্রেপ্তার করার জন্য বলা হয়েছে। এর বাইরে অন্য সাধারণকে হয়রানি বা গ্রেপ্তার করার সুযোগ নেই।