স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম সাংবিধানিক ধারাবাহিকতায় দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের উপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেছেন, পৃথিবীর কোন দেশেই অসংবিধানিক সরকার সেদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করেনি। আমাদের দেশেও সামরিক শাসকরা তাদের নিজেদের ভাগ্যের উন্নয়নে ব্যস্ত ছিল। তাই সাংবিধানিক ধারাবাহিকতায় আমাদের দেশেও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচন যারা প্রতিহতের চেষ্টা করবে দেশপ্রেমিক জনগণ অতীতের মতো তাদেরকে প্রতিহত করবে। তিনি আজ কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের নবনির্মিত ভবনের শুভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক খন্দকার মুশফিকুর রহমান, কুমিল্লার পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান, মনোহরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন এবং অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক লে. কর্নেল মো. রেজাউল করিম। মন্ত্রী এ সময় তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাকে বিতর্কিত করার জন্য বিএনপিকে দায়ী করে বলেন, বিচারপতি কেএম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান করার জন্য বিচারপতিদের বয়সসীমা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কে? তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদ নিজেই কিভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হয়েছিলেন? স্থানীয় সরকারমন্ত্রী এ সময় বিএনপিকে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ন্যাড়া বেলতলায় একবার গেলেও বিএনপি বারবার বেলতলায় যায়। মন্ত্রী বলেন, এদেশের মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষফোঁড়া আর ফিরে আসতে দিবে না।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নের কথা উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ পরিশ্রমী এবং বাংলাদেশের মাটি উর্বর হওয়া সত্বেও পশ্চিম পাকিস্তানিরা আমাদেরকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার ফলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার সংগ্রামে পুরো বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ করেন। মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে স্বাধীনতা অর্জন করে যখন তিনি নতুন দেশ গড়ার প্রত্যয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন তখনই ঘাতকেরা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালিকে হত্যা করে। তবে ঘাতকদের ষড়যন্ত্র সফল হয়নি কারণ বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যার হাত ধরে আজ বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে সম্মানের সাথে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে, বলেন তিনি।
মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় দেশকে খাদ্যের স্বয়ংসম্পূর্ণ করে গড়ে তুলেছিল। বিদ্যুৎ উৎপাদন ৪৩০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করেছিল। অথচ ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৩৩০০ মেগাওয়াটে নেমে আসে, বিদ্যুৎ, সার ও পানির দাবিতে আন্দোলনরত মানুষের উপর পুলিশের গুলিতে বহু মানুষ মারা যায়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উপর নির্মম অত্যাচারের পাশাপাশি দুর্নীতি ও অরাজকতায় ছেঁয়ে যায় দেশ, উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
মো. তাজুল ইসলাম এ সময় দেশের মানুষকে উৎসাহ উদ্দীপনায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সঠিক জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করে ভোটার হিসাবে তাদের দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ সামনের দিকে আরো এগিয়ে যাবে। মন্ত্রী তার বক্তৃতায় নিরীহ ফিলিস্তিনি মুসলমানদের হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, যারা আমাদেরকে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের বিষয়ে বিভিন্ন উপদেশ দেয় তারা নিরীহ মানুষ হত্যার বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখলে সারা পৃথিবীতে শান্তি বিরাজ করবে।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এরপর মনোহরগন্জ্ঞে দুর্গাপুর-খরখরিয়া ৫০ মিটার দীর্ঘ আরসিসি আর্চ গার্ডার ব্রিজের শুভ উদ্বোধন করে বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার এবং তাতে মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়েছে।