বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখন সিঙ্গাপুরে। এক দফা আন্দোলন ঘোষণা করে তিনি সিঙ্গাপুরে সস্ত্রীক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাচ্ছেন। এটি নিয়ে দলের মধ্যে তুলকালাম কাণ্ড চলছে, নানা রকম সমালোচনা হচ্ছে দলের ভেতরে-বাইরে। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তিনি যে এই আন্দোলনের ভরা জোয়ারের সময় সিঙ্গাপুরে গেলেন কার অনুমতি নিয়ে গেলেন? তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে গেছেন? একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, তারেক জিয়াকে তিনি শেষ মুহূর্তে বিষয়টি অবহিত করেছিলেন। তারেক জিয়া মির্জা ফখরুলের সিঙ্গাপুরে যাওয়ার বিষয়টি ইতিবাচকভাবে নেননি, তিনি বিরক্ত হয়েছেন। কিন্তু তারপরও তার কিছু করার ছিলনা। কারণ সেই সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন।
গত কিছুদিন ধরেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তারেক জিয়ার নাগালের মধ্যে নেই। বরং তিনি একটি ভিন্ন বলয় তৈরি করেছেন। ২০১৮ নির্বাচনের পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দলের মহাসচিব থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য বিএনপির মধ্যে প্রবল চাপ তৈরি হয়েছিল। বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারাও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ব্যর্থতার দায়দায়িত্ব নিয়ে সরে যাওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন। একটি অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির প্রয়াত নেতা মওদুদ আহমেদ ব্যর্থ নেতৃত্ব দেওয়ায় সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু দলের প্রচন্ড আপত্তি এবং সমালোচনার মুখেও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর টিকে যান মূলত তারেকের আনুকূল্যে এবং সমর্থনে। এই সময় তারেক জিয়ার কাছে কোনো বিকল্প নেতা ছিল না। আর সে কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দলের মহাসচিব পদ থেকে সরানোর চিন্তাভাবনা করেননি তিনি।
অনেকেই মনে করেন, মির্জা ফখরুল তারেক জিয়ার একান্ত অনুগত। তিনি যতটা না মহাসচিব তার চেয়ে তিনি তারেক জিয়ার একান্ত সচিব হিসেবেই মানানসই ভূমিকা পালন করেছিলেন। এ কারণেই তারেক জিয়া তাকে মহাসচিবের পদ থেকে হটাননি। কিন্তু আস্তে আস্তে যখন বিএনপির আন্দোলন বেগবান হতে থাকে এবং পশ্চিমা দেশগুলো বিএনপির প্রতি আগ্রহ দেখানো শুরু করে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিএনপির একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় সেই সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তারেক জিয়ার নাগালের বাইরে যেতে শুরু করেন। তিনি যতটা না মার্কিন দূতাবাস এবং মার্কিন কূটনীতিকদের অনুগত হতে থাকেন তার চেয়েও দূরত্ব তৈরি করতে থাকেন তারেক জিয়ার সঙ্গে।
বিএনপির বিভিন্ন নেতারা স্বীকার করেছেন, রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে তারেক জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের দূরত্ব তৈরি হচ্ছিল। বিশেষ করে এক দফা আন্দোলনের পর তারেক জিয়ার চাচ্ছিলেন জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর জাতীয় কর্মসূচি। কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সে ধরনের কর্মসূচিতে যেতে আগ্রহী ছিলেন না। কারণ পশ্চিমারা এ ধরনের আন্দোলনের কর্মসূচি পছন্দ করেনা।
বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৯ জুলাই বিএনপির যে ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছিল এটি সম্পর্কে মির্জা ফখরুল জানতেন না এবং তিনি ওই কর্মসূচিতে যোগদানও করেননি। তারেক জিয়ার একক আগ্রহে এই কর্মসূচি নেয়া হয়েছিল। যে কর্মসূচির কারণে বিএনপি ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে। এই কর্মসূচির পর থেকেই তারেক জিয়ার সাথে বিএনপি মহাসচিব এর দূরত্ব বাড়তে থাকে।
কেউ কেউ মনে করছেন, এই দূরত্বের কারণেই সিঙ্গাপুরে চলে গেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি দেখাতে চেয়েছেন যে তাকে ছাড়া আন্দোলনের কোনো গতি হয় না। তবে কোনো কোনো অংশ সূত্র বলছে, কূটনীতিকরা রাজনীতিতে গুড বয়দের নিয়ে যে একটি প্লাটফর্ম তৈরি করতে চাচ্ছেন তার অন্যতম একজন পছন্দের ব্যক্তি হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রয়েছেন। এ কারণেই তারেকের নাগালের বাইরে যাচ্ছেন। ভবিষ্যতে যদি বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি অনির্বাচিত ধারা আসে এবং সেখানে যদি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদেরকে নিয়ে ককটেল তৈরি করা হয় তাহলে সেখানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর থাকতে পারেন। এ কারণেই তিনি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। তারেকের ছায়া থেকে নিজেকে আলাদা করার জন্যই তিনি সিঙ্গাপুর গেছেন কিনা তা নিয়েও বিএনপির মধ্যে নানারকম জল্পনা-কল্পনা চলছে।