জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মহাসাগরগুলোর তাপমাত্রা আগের সব রেকর্ড ভেঙ্গেছে। ইউরোপিয় ইউনিয়নের জলবায়ু পরিবর্তন পরিষেবা- কোপার্নিকাসের হিসেবে, মহাসাগরগুলোয় এ বছর গড় তাপমাত্রা ২০ দশমিক নয় ছয় ডিগ্রিতে পৌঁছেছে, যা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, গরম পানির- কার্বন ডাই অক্সাইডের শোষণ ক্ষমতা কম থাকে। এর ফলে পরিবেশের তাপমাত্রা আরও বাড়ার পাশাপাশি দেখা দিয়েছে খাদ্য শৃংঙ্খল বিপর্যস্ত হওয়ার আশংকা।
মহাসাগরগুলোর উপরিভাগের দুই হাজার মিটার এলাকার তাপমাত্রা নিয়ে একটি গবেষণা চালিয়েছে ইউরোপিয় ইউনিয়নের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংস্থা কোপার্নিকাস। সেই গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে উদ্বেগজনক তথ্য। প্রতিবেদন অনুযায়ী, সা¤প্রতিক সময়ে সমুদ্রের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত ৩ থেকে ৫ ডিগ্রি বেশি। চলতি বছরে মহাসাগরগুলো ২০১৬ সালের তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙ্গেছে। সেসময় মহাসাগরগুলোর গড় তাপমাত্রা ছিলো ২০ দশমিক নয় পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আন্তঃসরকারি প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ এর তথ্য অনুসারে, ১৯৮২ এর তুলনায় ২০১৬-সালে সামুদ্রিক তাপপ্রবাহ দ্বিগুণ হয়েছে। এবং আগামীতে বায়ুপ্রবাহের দিক বদলের ফলে সমুদ্রের তাপমাত্রা আরও বাড়বে বলে আশংকা বিশেষজ্ঞদের।
এই মহাসাগরগুলো প্রকৃতি থেকে ৯০ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাস শোষণ করে এবং পৃথিবীর ৫০ শতাংশ অক্সিজেনের যোগান দেয়। তবে মহাসাগরগুলোর এই ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রায় উদ্বিগ্ন বিজ্ঞানীরা। তাদের মতে, বৃহৎ এই জলাধারগুলো উষ্ণ হয়ে গেলে কমে যাবে কার্বন ডাই অক্সাইড ও গ্রিন হাউস গ্যাস শোষণের পরিমাণ। সেইসাথে সমুদ্রতলের শৈবালগুলো মারা যাওয়ার কারণে কমে যাবে অক্সিজেনের উৎপাদন। ফলে, তাপ বিকিরণে বাধা দেয় এমন বিভিন্ন গ্যাসের উপস্থিতি বেড়ে বিশ্বের সার্বিক তাপমাত্রাকে নিয়ে যাবে অসহনীয় মাত্রার দিকে। ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বলছে, মহাসাগরগুলো তাপমাত্রা বেড়ে গেলে এখানে বসবাসরত হাঙ্গরসহ শিকারী প্রাণীগুলো আক্রমণাত্মক হয়ে উঠবে। যার কারণে বিপর্যস্ত হবে সমুদ্রের খাদ্যশৃঙ্খল ও বাস্তুসংস্থান।