ভারতের ইতিহাসে গতকাল ২৩ আগস্ট ছিল একটি স্মরণীয় দিন। চাঁদের অনাবিষ্কৃত দক্ষিণ মেরুতে প্রথম কোনও দেশ হিসেবে নিজেদের মহাকাশযান চন্দ্রযান-৩ এর সফল অবতরণ করে ভারত। ভারতজুড়ে আনন্দের বন্যা শুরু হয়েছে সফল এই অভিযান ঘিরে। যেকোন দেশের জন্য এটি একটি গর্বের বিষয়।
ভারতের এই সাফল্যের পেছনে যাদের অবদান সবচেয়ে বেশি তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার চেয়ারম্যান এস সোমনাথ। পড়াশোনা করেছেন মহাকাশযান প্রকৌশল বিদ্যায়। ভারতের বিজ্ঞান শিক্ষা বিষয়ক শীর্ষ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের সাবেক ছাত্র এস সোমনাথ চন্দ্রযান ৩’র প্রস্তুত প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে বুধবার সেটির চাঁদে নামা পর্যন্ত গোটা মিশনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এর পাশপাশি মার্ক-৩ বা বাহুবলি রকেটের নকশা প্রস্তুত করেছেন তিনি। এই বাহুবলি রকেটই চন্দ্রযান ৩কে চাঁদের কক্ষপথে ঢুকতে সহয়তা করেছে।
শুনলে হয়ত অনেকে হতে পারেন যে বাংলাদেশেও ‘বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান (স্পারসো)’ নামে একটি মহাকাশ গবেষণা সংস্থা আছে। যেখানে চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত আছে মোঃ আব্দুস সামাদ। তারারা যত আলোকবর্ষ দূরে, আকাশ মহাকাশের সাথেও তার সম্পর্ক ঠিক ততটাই দুরের। তিনি কোন বিজ্ঞানী কিংবা কোন মহাকাশ বিশেষজ্ঞ নন। কৃষি বিষয়ে স্নাতক এবং ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে স্নাতকোত্তর করা আব্দুস সামাদ বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের পঞ্চদশ ব্যাচের কর্মকর্তা। তবে তাতে কি? তিনি ঠিকই সব জানেন। কারণ তিনি সবজান্তা। তিনি একজন আমলা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর থেকে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান থেকে তথ্য অধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান সব পদ এখন আমলাদের দখলে। একটি দেশ যখন আমলাতন্ত্রের দ্বারা গ্রাস হয় তখন সেই দেশে উদ্ভাবনী, সৃজনশীল কোনকিছুই হয়না। সে কারণেই ভারত যেখানে চাঁদের মাটি স্পর্শ করছে, পুরো বিশ্বের কেউ আগে করেনি এমনসব মাইলফলক অর্জন করছে। সেখানে বাংলাদেশে সবজান্তা আমলারাই গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে বসে আছে।
আমলাদের কাছে দেশের স্বার্থের চেয়ে নিজের ক্যারিয়ারই মুখ্য। অবসর গ্রহণের পর তাদের জন্য আছে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ স্কিম। যারা চুক্তিতে নিয়োগ পান না, তাদের অবসরকালীন সময় কাটানোর জন্য রয়েছে বিভিন্ন কমিশন এবং নানা প্রতিষ্ঠান আছে তাদের। রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান দখল করে নিয়েছেন আমাদের সর্ববিষয়ে পণ্ডিত আমলারা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রানিসম্পদ, কৃষি ইত্যাদি বিশেষায়িত খাতগুলোতে বিশেষায়িত লোক নিয়গ দিতে হবে। গবেষণা এবং উদ্ভাবনে মনযোগী হতে হবে। তাহলেই ভারতের বাংলাদেশও বিশ্বে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারবে। ভারত যদি এস সোমনাথের পরিবর্তে আব্দুস সামাদের মত কোন আমলাকে নিয়োগ দিত তাহলে হয়ত আগামী ১০০ বছরেও ভারত চাঁদের মাটিতে পা রাখতে পারত না।