চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ৩ শিক্ষার্থী হতাহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গাড়ি পোড়ানোর প্রতিবাদসহ ৪ দফা দাবিতে চলছে পরিবহণ ধর্মঘট। এতে যানবাহনশূন্য হয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কর্মস্থলমুখী মানুষকে। অনেকে ধর্মঘটের বিষয়ে জানেন না। রাস্তায় গিয়ে গাড়ি না পেয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধর্মঘটের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ধুমঘাট ব্রিজ থেকে চট্টগ্রাম নগরীর প্রবেশমুখ সিটি গেইট পর্যন্ত কোনো ধরনের গণপরিবহণ চলাচল করছে না। মাঝে মধ্যে দু’একটি পণ্যবোঝাই গাড়ি চলাচল করলেও অন্যদিনের তুলনায় অপ্রতুল। মিরসরাই পৌর সদরে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করা এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য রাস্তায় এসে দেখি কোনো গণপরিবহন চলাচল করছে না। আমি ভাটিয়ারি যাবো। প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করছি। কীভাবে যাব বুঝছি না।
বড়তাকিয়া বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করা মঘাদিয়া এলাকার একজন বলেন, আজ চট্টগ্রাম আদালতে আমার একটি জায়গা সংক্রান্ত মামলার শুনানি রয়েছে। কিন্তু রাস্তায় কোনো গাড়ি নেই। আমাকে যেভাবেই হোক যেতে হবে। এছাড়া, আজ অনেক দিন পর স্কুল, কলেজসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে। অনেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সময় মতো যেতে পারেনি।এক স্কুল শিক্ষক জানান, প্রায় এক মাস বন্ধ থাকার পর আজ থেকে স্কুল খোলা। সকালে রাস্তায় দেখি কোনো বাস চলছে না। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা রিজার্ভ করতে হয়েছে। যেখানে আমার ভাড়া লাগে ৪০ টাকা, এখন ভাড়া গুণতে হয়েছে ২০০ টাকা। জানা গেছে, বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৫ জেলায় রোববার (২৮ এপ্রিল) সকাল ৬টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহণ মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। শনিবার দুপুরে পরিষদের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয় বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সদস্য সচিব মো. মুছা।
ধর্মঘটে বারইয়ারহাট বাসস্ট্যান্ড, চট্টগ্রাম নগরীর মাদারবাড়ি ও কোতয়ালী বাস স্ট্যান্ড থেকে রোববার সকাল থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। বন্ধ রয়েছে মহাসড়কে চলাচল করা লেগুনা ও সেইফ লাইন পরিবহণের গাড়িও। বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহণ মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মো. মুছা বলেন, চুয়েটে ২ ছাত্রের মৃত্যুর পর বিষয়টি নিয়ে সমাধান হওয়ার পরও আমাদের গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আমাদের সম্পদ ও পরিবহণ শ্রমিকদের নিরাপত্তা চাই। আমাদের চার দফা দাবির মধ্যে প্রথম দফা হলো, বিভিন্ন সময় জেলার বিভিন্ন পোস্ট ও স্টেশন থেকে লাইনম্যানসহ অনেক পরিবহণ শ্রমিককে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাম দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়, মিথ্যা মামলা দেয়া হয়। এমনকি যাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই তাদেরও মামলার আসামি করা হয়। কখনো গাড়ি পার্কিং, কখনো কাগজ না থাকা, এমন সব অহেতুক অজুহাতে ধরে নিয়ে যায়। পরিবহণ শ্রমিকদের পকেটে থাকা টাকা কেড়ে নিয়েও তাদের হয়রানিমূলক মামলা দেয়া হয়। শফি নামে আমাদের এক পরিবহন শ্রমিক নেতাসহ কয়েকজন এখনো জামিন পায়নি।
দ্বিতীয় দফার বিষয়ে তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে চুয়েটের ৩ শিক্ষার্থী একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় পড়েন। এতে আমরা মর্মাহত। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে টানা সড়ক অবরোধ ও গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় প্রশাসনের উপস্থিতিতে বৈঠকের পরও সেসব সিদ্ধান্ত না মেনে সড়কে যারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘটের প্রথম দিন চলছে আজ।