বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার জন্য আদালতের কাছে আবেদন করতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তাদের যদি (বিদেশে যাওয়া অনুমতি) চাইতে হয়, তাহলে আবার আদালতে যেতে হবে। আদালতের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। আদালতের কাজের ওপর আমাদের হস্তক্ষেপ করার কোনো সুযোগ নেই। যুক্তরাষ্ট্র সফররত প্রধানমন্ত্রী ওয়াশিংটন ডিসি স্থানীয় সময় বুধবার ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন। সাক্ষাৎকারে ভয়েস অব আমেরিকার সাংবাদিক শতরূপা বড়ুয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অসুস্থতার প্রসঙ্গ তুলে তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি সরকার পুনর্বিবেচনা করবে কিনা জানতে চান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, পৃথিবীর কোন দেশে সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে পেরেছে বা কোনো দেশ সেটা দেবে? তাদের আবার আদালতে আবেদন করতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেটুকু করতে পেরেছি তার জন্য, আমার যেটুকু সরকার প্রধান হিসেবে ক্ষমতা আছে, সেখানে- তার সাজাটা স্থগিত করে বাড়িতে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে এবং চিকিৎসা নিচ্ছে। সে নিজেই চিকিৎসা নিচ্ছেন এখন, বাংলাদেশের সবচেয়ে দামী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। বিদেশে চিকিৎসা নিতে যেতে হলে খালেদা জিয়াকে আবার জেলে যেতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর যদি তাকে যেতে হয় (দেশের) বাইরে, তাহলে এখন যে আমি তাকে বাসায় থাকার অনুমতিটা দিয়েছি, এটা আমাকে তুলে নিতে হবে। তাকে (খালেদা জিয়া) আবার জেলে যেতে হবে এবং আদালতে যেতে হবে। আদালতের কাছে আবেদন করতে হবে। আদালত যদি রায় দেয়, তখন সে যেতে পারবে। এটা হলো বাস্তবতা। উল্লেখ্য, গত ৯ আগস্ট থেকে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। এরইমধ্যে গত দুই সপ্তাহে তাকে শ্বাসকষ্টের কারণে দুই দফায় সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। গত বছরের জুনে এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা একাধিকবার সংবাদ সম্মেলন করে জানান, খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থরাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদ্রোগে ভুগছেন। তার পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণের পাশাপাশি তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। এমন পরিস্থিতিতে উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশের পাঠানোর ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে দাবি করে আসছে বিএনপি। এদিকে বাংলাদেশে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আরও স্যাংশন দিতে পারে, এটা তাদের ইচ্ছা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তারা কী কারণে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। ভোটের অধিকারের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ভোটের অধিকার নিয়ে সংগ্রাম করেছে। অনেক নেতাকর্মী রক্ত দিয়েছে, এই ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যত ধরনের সংস্কার দরকার সেটা আমরাই করেছি। ছবিসহ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স। মানুষের ভোটের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’- এই স্লোগান আমার দেওয়া। আমি এভাবে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছি। সে ক্ষেত্রে ভোট নিয়ে হঠাৎ স্যাংশন দেওয়ার কোনো যুক্তি আছে বলে আমি মনে করি না। তিনি বলেন, দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী আমার কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্থার কেউ যদি কোনো অন্যায় করে তার কিন্তু বিচার হয়। এই বিচারে কিন্তু কেউ রেহাই পায় না। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, পৃথিবীর কোন দেশ দণ্ডিত আসামিকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে পেরেছে? পৃথিবীর কোনো দেশ দেবে? তাদের যদি চাইতে হয়, তা হলে আবার আদালতে যেতে হবে। আদালতের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। আদালতের কাজে আমাদের হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই।