নির্বাচনের সময় যতই এগিয়ে আসছে, ততই বিএনপির মধ্যে হতাশা বাড়ছে। বর্তমান সরকারের পতনের লক্ষ্যে এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। কিন্তু এই এক দফা কর্মসূচি মাঝপথে গিয়ে হোঁচট খেয়েছে। পদযাত্রা আর সমাবেশের মধ্যেই এই কর্মসূচি ঘুরপাক খাচ্ছে। এরকম একটি পরিস্থিতিতে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। বিএনপি সামনে কি করবে এবং কিভাবে এগোবে সেটি নিয়েও দলের মধ্যে মতবিরোধ এখন প্রকাশ্য রূপ গ্রহণ করেছে।
যে সমস্ত বিষয় নিয়ে বিএনপির মধ্যে হতাশা ঘনীভূত হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে;
১. দিকভ্রান্ত আন্দোলন: বিএনপির আন্দোলনকে বিএনপির নেতারা এখন বিভ্রান্ত আন্দোলন হিসেবে চিহ্নিত করছে। তারা বলছে, এক দফা আন্দোলন ঘোষণা করার পর যে ধরনের কর্মসূচি দেওয়া উচিত ছিল সেই ধরনের কর্মসূচি বিএনপি দিতে পারছে না। বরং পুরোনো কর্মসূচিতে কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা তৈরি হচ্ছে।
২. জনগণ সম্পৃক্ত হচ্ছে না: বিএনপির নেতারা স্বীকার করেন যে, বর্তমান সময়ে জনজীবনে নানা রকম সমস্যা রয়েছে। যেমন- দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ আছে। কিন্তু এই অসন্তোষ গুলোকে কাজে লাগিয়ে বিএনপি তার আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারছে না। এটি নিয়েও দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে।
৩. আন্তর্জাতিক চাপ: বিএনপি মনে করেছিল যে, আন্তর্জাতিক চাপ বিএনপির পক্ষে আসবে এবং আন্তর্জাতিক চাপের কারণেই সরকার শেষ পর্যন্ত বিএনপির দাবি মানতে বাধ্য হবে বা বিএনপিকে ছাড়া একটি নির্বাচন করলে সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। কিন্তু নির্বাচনের সময় যত এগিয়ে আসছে ততই সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ কমে আসছে। উল্টো বিএনপির ওপরেই নানা রকম আন্তর্জাতিক চাপ তৈরী হচ্ছে. ভারত ইতিমধ্যে সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে সরকারের ব্যাপারে এখন অতটা নেতিবাচক না সেটি বিএনপির নেতারা মনে করছেন। তাছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য সরকারের ওপর বড় ধরনের চাপ দেওয়া হবে এমন কোনো ইঙ্গিতও পাচ্ছেন না বিএনপির নেতারা। ফলে আন্তর্জাতিক যে চাপটি বিএনপি সরকারের ওপর পড়বে বলে আশা করেছিল সেটি পড়ছে না বলে এক ধরনের হতাশায় ভুগছে।
৪. রাজনৈতিক সঙ্গহীন: বিএনপি ২০১৮ নির্বাচনের পরই ২০ দলকে ভেঙে দিয়েছিল। এখন কার্যত ২০ দল নেই। জামাতের সঙ্গে বিএনপি প্রকাশ্য সম্পর্ক করছে না। আর অন্যদিকে যে ৩৪ টি রাজনৈতিক দলকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন করছে সেই দলগুলো শক্তিশালী নয়। বিএনপি জাতীয় পার্টির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করেছিল কিন্তু নানা কারণে জাতীয় পার্টির সঙ্গেও বিএনপি ঘনিষ্ঠ হতে পারেনি। বরং বিএনপির পক্ষ থেকে জাতীয় পার্টির সাথে যোগাযোগ করে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে রাজনীতিতে বিএনপি যে কৌশল নিয়েছিল যে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখবে সেই অবস্থা এবং বাস্তবতা এখন আর নেই। বরং সকলেই এখন মনে করছে যে নির্বাচনে যাওয়াটাই ভালো হবে। তাছাড়া বিএনপির আন্দোলনের ওপরও অনেক রাজনৈতিক দল আস্থা রাখতে পারছে না।
৫. প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথেও বিরোধ: বিএনপি মনে করেছিল যে, প্রশাসনে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে যারা বিএনপিপন্থী আছে তারা আস্তে আস্তে খোলস পাল্টে বেরিয়ে আসবে এবং সরকারের বিরোধিতা করবে। কিন্তু সেক্ষেত্রেও বিএনপি খুব একটা সফল হতে পারছে না। বরং বিএনপির প্রতি তাদের এক ধরনের সন্দেহ অবিশ্বাস দেখা যাচ্ছে। এটি নিয়েও বিএনপির মধ্যে এক ধরনের হতাশা তৈরি হয়েছে। আর এই হতাশা কাটিয়ে বিএনপি শেষ পর্যন্ত আন্দোলনে অটুট থাকবে নাকি নির্বাচনে যাবে সেটাই দেখার বিষয়।