রাজধানীতে ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সাধারণ বা ছোটখাটো ছিনতাই নয়, সংঘবদ্ধ ও ‘পেশাদার’ ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটছে। ধারালো অস্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রতিদিনই খবরের কাগজে থাকছে ছিনতাইয়ের বহু খবর। রাতে ও ভোরে ঢাকা একেবারেই অনিরাপদ। দিনে বা সন্ধ্যায় মোটরসাইকেলে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। রাতে বা ভোরে ছিনতাইকারীরা বের হয় প্রাইভেট কার নিয়ে। মোটরসাইকেল বা প্রাইভেট কারে মহিলাদের ভ্যানিটি ব্যাগ, রিকশাযাত্রীদের মোবাইল ফোনসেট, মানিব্যাগ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।
রাজধানী ঢাকার ভুক্তভোগীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গণমাধ্যমের প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, রাত ৮টা থেকে মধ্যরাত, সাহরি থেকে সকাল পর্যন্ত ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বেশি থাকে। প্রতিদিন গড়ে ২৫টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।
গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ছুরিসহ অন্যান্য ধারালো অস্ত্রের আঘাত নিয়ে গত দুই সপ্তাহে রাজধানীর তিন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ৭২ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁরা মূলত ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে জরুরি বিভাগে এসেছেন।
জাতীয় অর্থোপেডিক ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের তথ্য বলছে, গত দুই সপ্তাহে এই হাসপাতালে ছিনতাইয়ের শিকার ৪৪ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। একইভাবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৫ জন এবং পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৩ জন।
ঈদের ছুটি শেষে ২ জুলাই ঢাকায় ফিরে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে ট্রাফিক পুলিশের এক কনস্টেবল নিহত হওয়ার পর ঢাকা মহানগর পুলিশ ছিনতাই দমনে বিশেষ অভিযান শুরু করে। বিশেষ অভিযানে পুলিশ ছিনতাইয়ের অভিযোগে ৫৯১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা দিয়েছে পুলিশ।
ঈদের আগেও এক হাজার ৭৬৪ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। চলমান বিশেষ অভিযানে থানা পুলিশই নয়, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ এবং র্যাবও কাজ করছে। পুলিশের ভাষ্য, গ্রেপ্তার হওয়া অনেকে এর আগেও গ্রেপ্তার হয়েছিল। কিন্তু জামিনে বেরিয়ে এসে আবার ছিনতাই করছে। এমন ছিনতাইকারীও পাওয়া গেছে যে এ পর্যন্ত আটবার গ্রেপ্তার হয়েছিল। কারাগার থেকে বেরিয়ে ফের ছিনতাইয়ে জড়িয়েছে।
এসআইভিএস নামের সফটওয়্যারের তথ্যভাণ্ডারে থাকা তথ্যানুযায়ী, রাজধানীর ৫০ থানা এলাকায় ছয় হাজার ১৯৮ জন ডাকাত ও ছিনতাইকারী রয়েছে। তাদের মধ্যে এক হাজার ৭৩৭ জন ছিনতাই এবং চার হাজার ৪৬১ জন ডাকাতিতে জড়িত। ওই তথ্যভাণ্ডারে জড়িত ব্যক্তিদের পূর্ণাঙ্গ বৃত্তান্তও রয়েছে। এদের অনেকে আগেও গ্রেপ্তার হয়েছিল। প্রশ্ন হচ্ছে, কী করে তারা জামিনে বেরিয়ে আসে? তাদের বিরুদ্ধে কিভাবে অভিযোগপত্র দায়ের করা হয়? রাজধানীতে ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়লে সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা দেখা দেবে। রাজধানীর ছিনতাইয়ের স্পটগুলো অনেক আগে থেকেই চিহ্নিত, তাহলে ছিনতাই বন্ধ করা যাবে না কেন?
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, বিশেষ করে পুলিশ ও র্যাবকে আরো তৎপর হতে হবে। বাড়তি টহলের ব্যবস্থা করলে মানুষ নিরাপদ বোধ করবে।