দেশের অমূল্য সব প্রত্নসম্পদ দখল ও বেহাত ঠেকাতে এবং সংরক্ষণে নতুন আইন করতে যাচ্ছে সরকার। অমূল্য প্রত্নসম্পদ এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা ও সংরক্ষণে ‘প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ আইন, ২০২৪’ এর খসড়া মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন হতে যাচ্ছে। সোমবার (০৬ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মন্ত্রিসভা কক্ষে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমি আইন, ২০২৪ এর খসড়াসহ বেশ কয়েকটি আইনের খসড়া অনুমোদনের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হওয়ার কথা আছে।
প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ আইনটির খসড়ায় বলা হয়েছে, দেশে যুগোপযোগী আইন না থাকায় নানা প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে বিঘ্ন ঘটছে। দখল ও বেহাত হয়েছে অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান ও নিদর্শন। যুগোপযোগী আইন না থাকায় ব্রিটিশ আমলে প্রণীত আইনটির ফাঁক গলিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক প্রত্ন সম্পদ। প্রত্নসম্পদ এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা ও সংরক্ষণে পুরোনো আইন রোহিত করে ২০১৫ সালে নতুন আইন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে নানা প্রক্রিয়া শেষে আইনটির খসড়া করা হয়। এখন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ আইন, ২০২৪ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদনের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। এ আইনের খসড়ায় প্রত্নসম্পদকে ‘অমূল্য’ আখ্যা দিয়ে এর ক্ষতিসাধন, ধ্বংস, ভাঙা, বিনষ্ট, পরিবর্তন করলে ১০ বছর কারাদণ্ড অথবা ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
প্রত্ন সম্পদ রক্ষায় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অধিযাচন (ফরমায়েশপত্র) সাপেক্ষে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা যাবে। তাতে পুরাকীর্তির ব্যবসা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধের বিধান এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে পুরাকীর্তির অনুকৃতির ব্যবসার অনুমোদন দেওয়া হবে।
তাতে আরও বলা হয়, রাষ্ট্রীয় প্রত্নসম্পদের পাচার রোধে সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনো প্রত্নসম্পদ প্রদর্শনী ও গবেষণার স্বার্থে পরীক্ষার জন্য দেশের বাইরে পাঠানো যাবে না। এ বিধান অমান্যকারী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত হলেও সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
এছাড়া নতুন আইনে স্থাবর প্রত্নসম্পদের সর্বোচ্চ সুরক্ষিত এলাকা বা প্রপার্টি জোন ও বিশেষ সুরক্ষিত এলাকা সুনির্দিষ্ট থাকবে। বিশেষ সুরক্ষিত এলাকায় কোনো বহুতল ভবন নির্মাণ, ইটভাটা, কলকারখানা স্থাপন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, রাস্তা নির্মাণ করা যাবে না। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অনুমতি ব্যতীত কোনো খনন করা যাবে না।
আইনের খসড়ায় বলা হয়, দেশে প্রাপ্ত ও জাদুঘরে সংরক্ষিত প্রত্নসম্পদ বা প্রত্নবস্তুর বাজারমূল্য নির্ধারণ করা যাবে না। এগুলো অমূল্য সম্পদ হিসাবে পরিগণিত হবে। তবে সংশ্লিষ্ট প্রত্নসম্পদ মালিকের ক্ষতি পূরণের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ মূল্য নির্ধারণ করা যাবে। ব্যক্তিগত বা সাংগঠনিক পর্যায়ে কেউ প্রত্নসম্পদ বেচাকেনা বা সংগ্রহ করতে পারবেন না। তবে সরকারি মালিকানাধীন অথবা সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন জাদুঘর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে অবহিত করে প্রত্নসম্পদ সংগ্রহ করতে পারবে। আর উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত অথবা অন্য কোনো বেআইনি নয়- এমন অন্য কোনো সূত্র থেকে প্রাপ্ত প্রত্ন সম্পদ কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার কাছে থাকলে সেসব সম্পদের প্রমাণাদি অধিদপ্তরকে দিতে হবে। সেগুলো সংগ্রহে রাখা যাবে কিন্তু হস্তান্তর করা যাবে না। এছাড়া কোনো অস্থাবর প্রত্ন সম্পদ বা প্রত্নবস্তু বা প্রত্নসম্পদের অংশবিশেষ সরকারের অনুমতি ছাড়া বিদেশে পাঠানো যাবে না। এর ব্যত্যয় হলে শুল্ক আইনের আওতায় চোরাচালান হিসাবে গণ্য হবে।