ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, খাদ্য সংকট তৈরি করে রাশিয়া বৈশ্বিক বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায়। তিনি অভিযোগ করেছেন, মস্কো বিশ্ব বাজারে খাদ্য সরবরাহ ব্যাহত করতে এবং মূল্য সংকট সৃষ্টি করতে চায়। ইউক্রেনের কৃষ্ণসাগর তীরবর্তী বন্দর ও শস্য সংরক্ষণাগারে রাশিয়ার ড্রোন হামলার পর তিনি এই অভিযোগ করেন। খবর এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ব বাজারে খাদ্য সরবরাহ ব্যাহত করে দাম বাড়ানোসহ রাশিয়া বৈশ্বিক সংকট সৃষ্টি করতে চায় বলে অভিযোগ করেছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তার দাবি, এই কারণেই ইউক্রেনীয় বন্দর ও শস্য অবকাঠামোতে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া।
রয়টার্স বলছে, রাশিয়ার ড্রোন হামলার পর বুধবার রাতে ভিডিও ভাষণ দেন জেলেনস্কি। সেখানে তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার জন্য এটি কেবল আমাদের স্বাধীনতা এবং আমাদের দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নয়।’
তার ভাষায়, ‘মস্কো একটি বৈশ্বিক বিপর্যয় সৃষ্টির জন্য যুদ্ধ করছে। তাদের পাগলামি চিন্তা-ভাবনায়, রাশিয়ার জন্য বিশ্ব খাদ্য বাজারের ভেঙে পড়া প্রয়োজন। একইসঙ্গে তাদের মূল্য সংকট দরকার এবং বিশ্ব বাজারে খাদ্য সরবরাহে বাধা দেওয়াও প্রয়োজন।’
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। তবে ইউক্রেনীয় শস্য রপ্তানির জন্য অনুমোদিত কৃষ্ণসাগর শস্য চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে অস্বীকৃতি জানানোর পর সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনীয় কৃষি ও বন্দর অবকাঠামোর ওপর আক্রমণ বাড়িয়েছে রুশ সামরিক বাহিনী।
এরই ধারাবাহিকতায় ইউক্রেনের কৃষ্ণসাগর তীরবর্তী বন্দর ও শস্য সংরক্ষণাগারে বুধবার ড্রোন হামলা চালায় রাশিয়া। ভোরে চালানো এই হামলার ঘটনায় কয়েকটি অবকাঠামোতে আগুনও ধরে যায়। হামলায় অবশ্য হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
ইউক্রেনীয় মিডিয়া বলছে, কৃষ্ণসাগর থেকে এসব ড্রোন হামলা চালানো হয় এবং তারপর দানিয়ুব নদীর পাশ দিয়ে পশ্চিমে ইজমাইলের দিকে সেগুলো উড়ে যায়। ইজমাইলের এই বন্দরটি ইউক্রেনের অন্যতম প্রধান বন্দর যেখান থেকে ইউক্রেনীয় শস্য বার্জে করে কৃষ্ণসাগরের রোমানিয়ান কনস্টান্টা বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়।
মূলত নিজেদের শর্ত পূরণ না হওয়ায় কৃষ্ণসাগর শস্যচুক্তি থেকে সরে আসার ঘোষণা দেয় রাশিয়া। এক বছরের কিছু বেশি সময় আগে তুরস্ক ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে এ চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। চুক্তির মাধ্যমে কৃষ্ণসাগর দিয়ে নির্বিঘ্নে আন্তর্জাতিক বাজারে যেতে পারত ইউক্রেনের খাদ্যশস্য।
তবে গত ১৭ জুলাই চুক্তিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এরপর রাশিয়া সেটির মেয়াদ বাড়াতে অস্বীকৃতি জানায়। যদিও রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়ই বর্তমান বিশ্বের প্রধান শস্য রপ্তানিকারক দেশ। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গুরুত্বপূর্ণ এই চুক্তি ২০২২ সালের মার্চ মাস থেকে বিশ্বব্যাপী খাদ্য মূল্য ২৩ শতাংশ কমিয়ে দরিদ্র দেশগুলোকে উপকৃত করেছে।
তবে চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি না পাওয়ায় বিশ্ব বাজারে আবারও সংকট দেখা দিতে পারে। আর এতে করে দুর্দশার মুখে পড়তে পারে মূলত দরিদ্র দেশগুলোই।