নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে ৩ মাসের কম সময় হলো। নতুন সরকারে মন্ত্রীদের মধ্যে রাজনৈতিক পরিচিতি রয়েছে বেশীর ভাগের। রাজনৈতিক পরিচিত মুখদেরকে মন্ত্রীসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে আগের চেয়ে বেশি। আর একারণেই এবার নতুন মন্ত্রীরা দায়িত্ব গ্রহণ করার পর আমলাদের প্রভাব প্রতিপত্তি কমেছে। ২০১৮ এর মন্ত্রিসভায় যেমন ছিল যে আমলারাই ক্ষমতাবান হয়ে উঠেছিল এবং মন্ত্রীদের তারা রীতিমতো প্রাইভেট টিউটরের মতো লেখাপড়া করাতেন, অনেকটা পুতুল বানিয়ে রেখেছিলেন। আমলারা যা বলতেন সেটি মন্ত্রীরা করতেন। সেই অবস্থা থেকে আস্তে আস্তে সরে এসেছে প্রশাসন। এখন মন্ত্রণালয়গুলোতে আমলাদের ক্ষমতা আস্তে আস্তে হ্রাস হচ্ছে।
২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব উপ-প্রধানমন্ত্রীর মতোই আচরণ করতেন। সবক্ষেত্রেই তাকে ক্ষমতাবান দেখা হতো। বিশেষ করে যেকোন নীতি নির্ধারণী বিষয়ে তিনি আমলাদের নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতেন এবং মন্ত্রীরা অনেক পরে সেই সিদ্ধান্তগুলোর কথা জানতেন। কিন্তু এবার নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব অনেকটা নিরবে নিভৃতে কাজ করছেন। অবশ্য তার একটি কারণ যে, চুক্তিতে থাকা এই আমলা এখন অবসরের যাওয়ার প্রস্তুতিতে আছেন। আগামী জুলাই মাসে তার অবসরে যাওয়ার কথা রয়েছে।
গত মেয়াদে মন্ত্রী পরিষদ সচিব ছিলেন মুখ্য এবং সবসময় তাকে স্ব-প্রতিভ এবং আলোচনার মধ্যে দেখা যেত। এখন মন্ত্রী পরিষদ সচিব রুটিন কাজের মধ্যে তার অবস্থানে থেকে কাজ করেন। মন্ত্রিসভার নিয়মিত বিফ্রিং ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে তাকে কথা বলতে কম দেখা যায়। এক্ষেত্রে তিনি খন্দকার আনোয়ারের চেয়ে অনেক বেশী নিরবে নিভৃতে কাজ করতে পছন্দ করেন বলেই ধারণা করা হয়।
অন্যান্য মন্ত্রণালয়গুলোতেও আমলাদের ক্ষমতা, কর্তৃত্ব এবং প্রভাব সব কমেছে। গত মেয়াদেও স্থানীয় সরকারে যিনি মন্ত্রী ছিলেন তিনি আবার মন্ত্রী হয়েছেন। ইতিমধ্যে তিনি কাজ বুঝেছেন। প্রথমদিকে আমলাদের উপর তিনি অনেক বেশী নির্ভরশীল ছিলেন। আমলারাই তাকে পরিচালিত করাতেন। কিন্তু এখন তিনি মন্ত্রণালয়ে নিজের দখল নিয়েছেন এবং আমলাদেরকে তিনি নিজের সহকারী হিসেবে বানাতে পেরেছেন।
একই অবস্থা সড়ক, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্রেও। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে নতুন মন্ত্রী এসেছেন। কিন্তু মন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রী দু’জন থাকার কারণে এখানে আমলাদের প্রভাব এবং দাপট আগের চেয়ে কমেছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়টি আগে ছিল পুরোপুরিভাবে আমলা নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু এবার সেখানে একজন পূর্ন মন্ত্রী দেওয়া হয়েছে। যদিও এর সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী করা হয়েছিল। কিন্তু সৈয়দ আশরাফ ঐ মন্ত্রণালয়ের কাজে খুব একটা যেতেন না। এবার ফরহাদ হোসেন নিয়মিত যান এবং গত ৫ বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি এখন মন্ত্রণালয়ে কাজ করছেন। এবং নিবিড়ভাবে কাজ করার সক্ষমতা অর্জন করেছেন। ফলে সেখানেও আমলাদের প্রভাব কমেছে।
এভাবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়গুলোকে সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় যে, আমলাদের অবস্থান আগের চেয়েও অনেক কমেছে এবং এখন আমলাদের চেয়ে মন্ত্রীরা অনেক ক্ষমতাবান হয়ে উঠেছেন।
বিশেষ করে যারা রাজনীতিবিদ হিসেবে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, ড. দিপু মণি, হাছান মাহমুদ সেসমস্ত মন্ত্রণালয়গুলোতে আমলাদের আসলে যা করা উচিত সেটিই করত। আগে যেমন আমলারাই মন্ত্রণালয়গুলোর সর্বেসর্বা হতো। এবং মন্ত্রীদেরকে রীতিমতো গাইড করতেন এখন সে অবস্থার অবসান ঘটেছে। মন্ত্রীরা এখন আমলাদেরকে তাদের করণীয় বাতলে দিচ্ছেন। এটি নতুন সরকারের কাছে একটি ইতিবাচক অর্জন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে, সামনের দিনগুলোতে আমলাদের প্রভাব আরো বাড়ে কিনা সেটাই দেখার বিষয়।