অকৃষি খাতে কৃষি জমি কোনোভাবেই ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না। দিন দিন কৃষি জমি কমে যাওয়ায় কৃষি প্রাণ বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। এজন্য জমির শ্রেণি চিহ্নিত করে জোনিং পদ্ধতি চালু করতে হবে। জোনিং পদ্ধতি চালু করা গেলে কৃষি জমি সুরক্ষা করা সম্ভব হবে। তখন কৃষি জমিতে কেউ লবণ পানি ঢুকিয়ে মাছ চাষ করতে পারবে না। লবণ পানির চিংড়ি চাষের জোনেই কেবল তা চাষ করা যাবে। একইভাবে আবাসিক বাড়ি-ঘর নির্মাণ, কলকারখানা স্থাপনের জন্যও জোন চিহ্নিত করতে পারলে এসব খাতেও কৃষি জমির ব্যবহার কমবে। কিন্তু এসব নিয়ে সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় বা পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ভূমিকা চোখে পড়ে না। সাধারণ মানুষ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে, কিন্তু প্রতিকারের দায়িত্ব নিতে হবে রাষ্ট্রকে। কৃষি জমি রক্ষায় প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। শনিবার (১৯ আগস্ট) সাতক্ষীরা শহরের ম্যানগ্রোভ সভাঘরে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক আয়োজিত ‘কৃষি জমির সংকট, সংকটের কারণ এবং সমাধানের উপায়’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। সেমিনারে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আব্দুল হামিদের সভাপতিত্বে ও বারসিক কর্মকর্তা গাজী মাহিদা মিজানের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুন্দরবন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক ও সাংবাদিক রনজিত বর্মন। বক্তব্য রাখেন সনাক সাতক্ষীরার সাবেক সভাপতি অধ্যাপক পবিত্র মোহন দাস, ডিবি গার্লস হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক ও দৈনিক পত্রদূতের বার্তা সম্পাদক এসএম শহীদুল ইসলাম, সুন্দরবন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লিপিকা রায়, ডিপ্লোমা কৃষিবিদ এবং কৃষি ও কৃষকের গল্পের পরিচালক রাহাত রাজা, প্রথম আলো বন্ধুসভায় সভাপতি কর্ন বিশ^াস কেডি, প্রচার সম্পাদক তারিক ইসলাম, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য রক্ষা টিমের সভাপতি হাবিবুল হাসান, ভিবিডির সভাপতি হোসেন আলী, আমরা বন্ধু ফাউন্ডেশন ও ইয়েস সদস্য মুসফিকুর রহিম, শিক্ষার্থী রিজাউল করিম প্রমুখ। বক্তারা বলেন, কৃষি জমি রক্ষা করতে হলে সবার আগে স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে নদী ও খালগুলো বাঁচাতে হবে। নদী ও খাল বাঁচানো গেলে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে। জলাবদ্ধতাই কৃষি জমি ঘেরে রূপান্তরের অন্যতম কারণ। ঘের করে অনেকেই লাভবান হচ্ছে, কিন্তু ঘের করার কারণে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতা আরও বাড়ছে। কোনো কোনো এলাকায় সারাবছর জলাবদ্ধতা থাকছে। বাড়ি-ঘরে পানি উঠছে। সেখানকার কৃষি তো ধ্বংস হচ্ছেই, পরিবেশ-প্রতিবেশও মানুষ্য বসবাসের উপযোগী থাকছে না। বক্তারা বলেন, কৃষি জমিতে লবণ পানি উঠিয়ে চিংড়ি চাষ নিষিদ্ধ করতে হবে। লবণ পানির চিংড়ি চাষের জন্য আলাদা জোন করে দিতে হবে। একজন কৃষি জমিতে লবণ পানি উঠালে তার চার পাশের কৃষি জমিগুলোও চাষাবাদের অযোগ্য হয়ে পড়ে। সেখানে ফসল হানি ঘটে। বাধ্য হয়ে পাশের জমির মালিকরাও লবণ পানি উঠানো শুরু করেন। বক্তারা বলেন, রাষ্ট্রকেই কৃষি জমি রক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে। কৃষি মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগী হতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। যদি তারা কৃষি জমিতে ইটভাটা স্থাপন বন্ধ করতে না পারে, তাহলে তাদের কাজটা কী? তারা তো বন্ধ করতে পারেই না, উল্টো নতুন নতুন ভাটা স্থাপনের জন্য ছাড়পত্র দেন। এটা মেনে নেওয়া যাবে না।