• বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০৮ পূর্বাহ্ন
                               

কূটনৈতিক জটিলতায় আটকে আছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

রিপোর্টারঃ / ৩৭৭ বার ভিজিট
আপডেটঃ শুক্রবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৩
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

২৫ আগস্ট ২০১৭। প্রাণে বাঁচতে জন্মভূমির মায়া ছেড়ে সেই সময়ে নাফ নদীর এপার-ওপারে কাদামাটি পেরিয়ে রোহিঙ্গাদের অনিশ্চিত এক যাত্রায় হতবাক হয়েছিল বিশ্ব। হৃদয়স্পর্শী সেই মুহূর্তগুলো ছয় বছর পেরিয়ে জীবনযাত্রায় লাখো রোহিঙ্গার দিনরাত কাটছে ছন্দহীনভাবে, স্বাভাবিক জীবনে ফেরার স্বপ্ন হচ্ছে দীর্ঘায়িত। নিজ দেশে এখনও ফেরত পাঠাতে ব্যর্থ হওয়ায় বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এ দেশের জন্য বোঝা হয়ে উঠছে। কূটনৈতিক জটিলতায় আটকে আছে প্রত্যাবাসন। যদিও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করেছিল মিয়ানমার সরকার। কিন্তু সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি। এতে দীর্ঘ হচ্ছে রোহিঙ্গা সংকট।

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে প্রায়ই ঘটছে খুনাখুনি। মাদক কারবার, চোরাচালান, অপহরণ ও চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধে জড়াচ্ছে নানা গ্রুপ। সবমিলিয়ে দীর্ঘ অনিশ্চয়তায় আতঙ্কে আছেন তারা। পাশাপাশি তিন দফায় রেশন কমিয়ে দেয়ায় হতাশায় নানা রকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছেন রোহিঙ্গারা। বাংলাদেশ সরকার বলছে, হতাশ রোহিঙ্গারা জড়াচ্ছেন বিভিন্ন অপরাধে, রয়েছে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার শঙ্কাও। স্থানীয় প্রতিবেশ ও পরিবেশও পড়েছে বিপন্ন হওয়ার হুমকিতে।রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের ওপর চাপ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বিশেষ করে প্রত্যাবাসনে কোনও অগ্রগতি হচ্ছে না। এছাড়া, মিয়ানমার সেনাবাহিনী সবসময় রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে চরম বৈরী মনোভাব পোষণ করে আসছে। ফলে মিয়ানমারের সামরিক শাসনামলে এই সমস্যার সমাধান নিয়ে শঙ্কিত তারা। তবে নিজ দেশে ফিরতে চান রোহিঙ্গারা।

বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের কবে তাদের নিজ ভূমিতে ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে- এর স্পষ্ট উত্তর কারও কাছে নেই। কারণ, তাদের ঘিরে অনেক দেশের রয়েছে ‘স্বার্থের দ্বন্দ্ব’। মানবিক জায়গা থেকে তাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে কক্সবাজার ও আশপাশের জনপদে বেড়েছে নিরাপত্তা ঝুঁকি। আবার রোহিঙ্গাদের ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বাংলাদেশ সরকারকে মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। এরপরও থামানো যাচ্ছে না অপরাধী চক্রকে। অন্তত ১১টি সশস্ত্র গ্রুপ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সক্রিয়। নিজেদের মধ্যে সংঘাত ছাড়াও তারা মাঝেমধ্যে রোহিঙ্গা মাঝিদের (রোহিঙ্গা নেতা) খুন করছে। ছয় বছরে ক্যাম্পে হত্যার শিকার হয়েছে ১৭৬ জন। শুধু গত এক বছরে ৪৬ জন খুন হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সক্রিয় কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে দ্রুত রোহিঙ্গাদের সম্মানের সঙ্গে নিজ মাটিতে ফেরানো জরুরি। এটা করা না গেলে সামনে নতুন নতুন সংকট তৈরি হবে। ক্যাম্প ঘিরে অপরাধের পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকিও বাড়বে। মে মাসে প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহায়ক পরিবেশ ও পরিস্থিতি আছে কিনা, তা যাচাই করতে গিয়েছিল টেকনাফের রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলের সঙ্গে থাকা রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ সেলিম বলেন, মিয়ানমারে আমরা খুব জুলুমের (নির্যাতন) শিকার হয়ে প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছি। এখানে ছয় বছর শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু কোনও কূলকিনারা হয়নি। দিন দিন ক্যাম্পের পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। ফলে ছেলেমেয়েদের পাঠদান করাতে পারছি না। আমরা নিজ দেশে ফিরে যেতে চাই।

রেশন কমিয়ে দেয়ায় ক্যাম্পের পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে উল্লেখ করে মোহাম্মদ সেলিম বলেন, দাতা সংস্থাগুলো রেশন কমিয়ে দেয়ায় অনেকে হতাশ হয়ে নানা ধরনের অপরাধে জড়াচ্ছে। এটি নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা আবু সামা গণমাধ্যমকে বলেন, প্রত্যাবাসনের জন্য গত কয়েক মাস আগে আমাদের মিয়ানমার নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে গিয়ে দেখে আসলাম আমাদের জন্য প্রস্তুত রাখা ক্যাম্পগুলো। মিয়ানমারে তৈরি করা ক্যাম্পে ফিরতে চাই না, আমাদের বসতভিটে ফিরিয়ে দিলে যাবো। মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনে আমরা শরণার্থী হয়ে ক্যাম্পে আছি। আবার সেদেশে গিয়ে শরণার্থী হতে চাই না। রাখাইনে ফেলে আসা বসতভিটায় রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করা না হলে বাংলাদেশের আশ্রয়শিবিরে থাকা কোনও রোহিঙ্গা ফিরতে রাজি হবে না।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের তথ্যমতে, চীনের মধ্যস্থতায় ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে রোহিঙ্গা প্র্যাবাসন শুরর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। তখন প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ থেকে যে আট লাখ রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারে পাঠানো হয়েছিল, তার মধ্যে থেকে পাইলট প্রকল্পের আওতায় প্রথম ধাপে ১ হাজার ১৪০ জন রোহিঙ্গাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৭১১ জন রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সম্মতি পাওয়া গিয়েছিল। অবশিষ্ট ৪২৯ জন রোহিঙ্গার বিষয়ে মিয়ানমারের আপত্তি ছিল। বাংলাদেশ সরকারের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধি দল গত মার্চ মাসে টেকনাফে এসে ৪২৯ জন রোহিঙ্গার পাশাপাশি তাদের পরিবারে জন্ম নেয়া আরও ৫১ জন শিশুর তথ্য সংগ্রহ করে।

এরপর মে মাসে রাখাইন পরিস্থিতি দেখতে যান রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধি দল। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩ ক্যাম্পে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে আট লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর কয়েক মাসে। রোহিঙ্গা ঢলের ছয় বছর শেষ হলেও একজন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। এর আগে দুবার প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও রোহিঙ্গাদের অনীহার কারণে তা হয়নি। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে প্রত্যাবাসনের কোনও বিকল্প নেই উল্লেখ করে কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, বর্তমান সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য সব ধরনের মানবিকতা দেখিয়েছে। রোহিঙ্গারা রাখাইনে নিজেদের ভিটে বাড়িতে যেতে চায়। তাদের নিরাপত্তা এবং নাগরিকত্বের দাবিও রয়েছে। তারা কোনোমতেই রাখাইনে নির্মিত মডেল ভিলেজে যেতে চায় না। সম্প্রতি মিয়ানমার সরকার কিছু রোহিঙ্গাকে নিজেদের ভিটে বাড়িতে প্রত্যাবাসনের জন্য সম্মতি দিয়েছে। এখন যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে চাই আমরা।

add 1


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

আজকের দিন-তারিখ

  • বুধবার (সকাল ৮:০৮)
  • ২৫শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
  • ১০ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (শীতকাল)

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  

Our Website Visitors Summary

  • ২৮
  • ৬৪
  • ৬১৩
  • ১,৭৮৯
  • ২৫,৩৫৩
  • ৩৪,৩৬৬