• সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২১ পূর্বাহ্ন
                               

কতটা নিরাপত্তায় মোড়ানো মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বহনকারী বিমান

রিপোর্টারঃ / ২৬২ বার ভিজিট
আপডেটঃ বুধবার, ২২ মে, ২০২৪

মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শত্রু দেশ ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি রোববার এক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। এই দুর্ঘটনার পেছনে কারিগরি ত্রুটি না কি যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের হাত রয়েছে, তা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়াচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টও বেশ দূরত্বের পথ বিমানে চলাচল করে থাকেন। তাকে বহনকারী বিমান কতটা নিরাপদ? আর এর ভেতরে কী কী সুযোগ সুবিধা রয়েছে? মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বহনকারী বিমান এয়ার ফোর্স ওয়ান নামে পরিচিত। বোয়িংয়ের ৭৪৭ মডেলের বিমানকে মডিফাই করে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ব্যবহার করা হয়। এয়ার ফোর্স ওয়ানের বিমান যেন একটি বড় বাড়ি। মার্কিন প্রেসিডেন্টদের বহনকারী এই বিমানের ভেতর ৪ হাজার স্কয়ার ফিট ফ্লোর স্পেস রয়েছে। ২৩২ ফুট লম্বা এই বিমানে ৪টি জেট ইঞ্জিন রয়েছে। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬৩০ মাইল গতিতে ছুটতে সক্ষম বিমানটি ৪৫ হাজার ১০০ ফুট উঁচুতেও উড়তে পারে।

এয়ার ফোর্স ওয়ানের একেবারে নাকের ডগায় একটি মিডএয়ার রিফুয়েলিং প্রোব রয়েছে, অর্থাৎ আকাশে থাকা অবস্থাতেই বিমানে জ্বালানি ঢোকানো সম্ভব। ককপিটের পেছনে ক্রু লাউঞ্জ রয়েছে। সেখানে বিমানের পাইলট ও অন্য ক্রু সদস্যরা বিশ্রাম নেন। তবে এই লাউঞ্জটা সাধারণ ফ্লাইট ক্রুরা ব্যবহার করে থাকেন। এই লাউঞ্জের নিচে আরেকটি লাউঞ্জ রয়েছে, যেটি সাপোর্ট ক্রুরা ব্যবহার করে থাকেন। সবমিলিয়ে একটি ফ্লাইটে ২৬ জন ক্রু থাকতে পারেন। ক্রু লাউঞ্জের পেছনে একটি কমিউনিকেশন সেন্টার রয়েছে। বিমানে থাকা ৮৫টি টেলিফোন এবং ২০ টেলিভিশনের জন্য প্রয়োজনীয় সাপোর্ট এখান থেকেই আসে। এই রুমেই সর্বশেষ প্রযুক্তির রাডার, ট্র্যাকিং ও ডিফেন্স সিস্টেম রয়েছে। পরমাণু বিস্ফোরণ হলে ইলেকট্রোমেগনেটিক ইন্টারফেরায়েন্স থেকে এই রুম পুরোপুরি সুরক্ষিত। বিমানের একেবারে সামনের অংশে নিচের ডেকে প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত স্যুট রয়েছে। এই স্যুটে একটি বিছানা, সোফা, ড্রেসিং রুম এবং শাওয়ারসহ একটি বাথরুম রয়েছে। সেখানে একটি ছোট জিমও রয়েছে। স্যুটের পেছনে প্রেসিডেন্টের অফিস। এটাকে আকাশেই ওভাল অফিস বলা যেতে পারে। উপদেষ্টা বা বিশেষ অতিথির সঙ্গে এই অফিসে বসেই কথাবার্তা বলতে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

মাঝে মাঝে এই রুম বসে শুধু ব্যক্তিগত অতিথিই নয় অন্যদের কাছেও বার্তা পৌঁছাতে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর এই রুমে সম্প্রচারের জন্য প্রয়োজনীয় টেলিকমিউনিকেশন ইকুপমেইন্ট বসানো হয়, যাতে ৩০ হাজার ফুট উঁচু থেকেই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে পারেন। এয়ার ফোর্স ওয়ানে একটি মেডিকেল স্যুটও রয়েছে। এখানে জরুরি ফার্স্ট এইড দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি রয়েছে। এটিকে অপারেশন রুম হিসেবেও ব্যবহার করা সম্ভব। যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট এয়ার ফোর্স ওয়ানে চড়ে বসেন, তখন ফ্লাইটে একজন ডাক্তারও থাকে, যেন প্রয়োজনে তিনি কাজে আসেন।

বিমানের রান্নাঘরও রাজকীয়। এখানে একসঙ্গে ১০০ লোকের খাবার রান্না করা যায়। আর ২ হাজার মিল তৈরি জন্য প্রয়োজনীয় খাবার রাখার ব্যবস্থাও রয়েছে এয়ার ফোর্স ওয়ানে। প্রেসিডেন্টের সহযোগী ছাড়াও এয়ার ফোর্স ওয়ানে অতিরিক্ত অতিথি বহন করা সম্ভব। ক্রুসহ ১০২ জন এয়ার ফোর্স ওয়ানে চড়তে পারেন। সিনিয়র স্টাফদের জন্য একটি ছোট রুম রয়েছে। অপেক্ষাকৃত ছোট এই রুমে বিজনেস ক্লাস স্টাইলের সিট রয়েছে। এখানে বসে প্রেসিডেন্ট তার টিমের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের সঙ্গে গোপনীয় আলাপ সারেন। এই রুমের পাশেই রয়েছে কনফারেন্স রুম। এখানে একটি বড় সেন্ট্রাল টেবিল ঘিরে ৮টি এক্সিকিউটিভ লেদার চেয়ার রয়েছে। সহযোগী ও অন্য অতিথিদের জন্য রয়েছে অতিরিক্ত সোফা। এখানে রয়েছে একটি বড় টিভি স্ক্রিন। এর মাধ্যম সংবাদ দেখা এবং স্থলে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করা যায়।

প্রেসিডেন্টের অফিস স্টাফদের জন্যও আলাদা রুম রয়েছে। যেখানে ওয়াইফাই, ফ্যাক্স মেশিন, ফোন ও টিভি রয়েছে। স্টাফ রুমের পেছনে অতিথিদের জন্য কেবিন রয়েছে। এটা অনেকটা বাণিজ্যিক বিমানের কেবিনের সমান। এর পাশে রয়েছে অতিথি ও প্রেসের জন্য বাথরুম। মজার বিষয় হচ্ছে, প্রেসকর্মীদের বিমানে ওঠার জন্য আলাদা সিঁড়ি রয়েছে। এয়ার ফোর্স ওয়ান একটি উড়ন্ত দুর্গের মতো। মার্কিন প্রেসিডেন্টকে নিরাপদে রাখতে এখানে বিভিন্ন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় প্রতিস্থানপন করা হয়েছে। আর এজন্যই এটিকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে অভেদ্য বিমান’ বলা হয়। এই বিমানে কী ধরনের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, তার সবটা জানা যায় না। তবে শত্রুর রাডার জ্যাম করতে বিমানে রয়েছে ইলেকট্রনিক কাউন্টার মেজারস- ইসিএম। আবার মিসাইলকে ডাইভার্ট করতে রয়েছে ইনফ্রারেড কাউন্টার মেজার-আইআরসিএম।

এই বিমানের পাখায় এমন প্রযুক্তি রয়েছে, যা ব্যবহার করে রাডার-গাইডেড মিসাইলকে এবং হিট-সিকিং মিসাইলকে পথভ্রষ্ট করা সম্ভব। এয়ার ফোর্স ওয়ানের পেটের অংশে ডিওএন এলএআইআরসিএম সিস্টেম রয়েছে। এই সিস্টেম স্থল থেকে আকাশে নিক্ষেপিত মিসাইল এবং ম্যান পোর্টেবেল এয়ার ডিফেন্স মিসাইলের গতিপথ বদলে দিতে পারে। পুরো বিমান আর্মার প্লেটিং দিয়ে কোটিং করা, যেন স্থলে পরমাণু বিস্ফোরণ হলে সুরক্ষা পাওয়া যায়। সব জানালাতেও আর্মার গ্লাস ব্যবহার করা হয়েছে।

add 1


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর

আজকের দিন-তারিখ

  • সোমবার (সকাল ১০:২১)
  • ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
  • ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (শীতকাল)

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  

Our Website Visitors Summary

  • ৩২
  • ৫৯
  • ৬১৭
  • ১,৬৯১
  • ২৫,২৯২
  • ৩৪,১৮৩