হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত সাত হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনির নাম প্রকাশ করেছে। সংঘাতে ফিলিস্তিনে নিহতদের সংখ্যা নিয়ে বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সংশয় প্রকাশের পর দুই শত ১২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ এই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রকাশিত তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তারা গত ৭ অক্টোবর গাজায় শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলার শিকার। তালিকায় ৭ হাজার নামের মধ্যে ২ হাজার ৬৬৫টি শিশু। নিহতদের সবাইকে ‘শহিদ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তালিকার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) রীতিমতো ভাইরাল হয়ে গেছে।
চলতি মাসের ৭ তারিখ ইসরায়েলে দক্ষিণাঞ্চলে গাজার শাসকগোষ্ঠী ও মুক্তিকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের অতর্কিত হামলার জেরে সেদিনই গাজায় ভয়াবহ হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) ছিল এ হামলার ২০তম দিন ছিল। হামলার শুরু থেকেই নিয়মিত হতাহতের সংখ্যা প্রকাশ করে আসছে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়, ‘প্রতিটি সংখ্যার পেছনে রয়েছে একজন মানুষের গল্প।’
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা হতাহতের এ সংখ্যা নির্ভরযোগ্য বলে মনে করলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এটাকে অতিরঞ্জিত বলে সন্দেহ প্রকাশ করে আসছেন। এরই জবাবে নিহতদের নামের তালিকা প্রকাশ করেছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যা প্রতিনিয়ত হালনাগাদ করা হচ্ছে।
এদিকে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলা বন্ধ করতে বিশ্বনেতাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি প্রতিনিধি রিয়াদ মানসুর। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘের এক জরুরি বৈঠকে দেয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে সর্বাত্মক অবরোধের মুখে থাকা প্রায় ২৩ লাখ ফিলিস্তিনের জন্যে পাঠানো ত্রাণ সহায়তা বাড়ানোরও আহ্বান জানান তিনি। যাদের বেঁচে থাকা এই সহায়তার উপর নির্ভর করছে তাদের কথা বিবেচনা করুন।
যুদ্ধবিরতির প্রশ্নে, মানসুর বলেন, আমি কিছু দেশের নাম উল্লেখ করতে চাই না যারা গাজায় অতিসত্ত্বে যুদ্ধ বন্ধের ইস্যুতে দ্বৈত নীতি অনুসরণ করছে। খবর আল জাজিরা।
ভাষণের শুরুতেই রিয়াদ মানসুর ইসরায়েলের বিমান হামলা থেকে গাজার বেসামরিক মানুষের জীবন বাঁচাতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। ভাষণের এক পর্যায়ে গাজায় বোমা হামলায় নিহত শিশুদের নিয়ে কিছু ঘটনা পড়ে শোনান ফিলিস্তিনি প্রতিনিধি। এ সময় তার কণ্ঠ ধরে আসছিল, হাত কাঁপছিল।
গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত ২১তম দিনে গড়িয়েছে। এখনো প্রতিদিন অবরুদ্ধ গাজায় নারকীয় বোমা বর্ষণ করে চলেছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত এ উপত্যকাটিতে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ২৮। তাদের মধ্যে শিশু ২ হাজার ৯১৩টি। নারী ১ হাজার ৭০৯ ও বৃদ্ধ ৩৯৭ জন। এর মধ্যে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নিহত হয়েছেন প্রায় ৫০০ জন।