ইউরো বাছাইপর্বে গতকাল বুধবার সবগুলো শীর্ষ দলই জয় পেয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ইউক্রেনকে ২-১ গোলে হারিয়ে ইউরোর আশা টিকিয়ে রেখেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইতালি। স্পেন ও বেলজিয়াম বড় ব্যবধানে জয়ী হয়েছে, অস্ট্রিয়া ও সুইজারল্যান্ডও নিজ নিজ ম্যাচে জয়ী হয়ে বাছাইপর্বে নিজেদের ভালমতই টিকিয়ে রেখেছে। গ্রানাডায় বদলী খেলোয়াড় ফেরান তোরেসের জোড়া গোলের সাথে গাভি, মিকেল মেরিনো, জোসেলু ও অভিষিক্ত এ্যালেক্স বায়েনার গোলে সাইপ্রাসকে ৬-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়েছে স্পেন। বড় এই জয়ে গ্রুপ-এ’র শীর্ষে থাকা স্কটল্যান্ডের থেকে এক ম্যাচ কম খেলে ৬ পয়েন্টে পিছিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে স্পেন। পরের রাউন্ডে আগামী ১২ অক্টোবর সেভিয়ায় এই দুই দল মুখোমুখি হবে। গতকাল ম্যাচ শেষে স্প্যানিশ কোচ লুইস ডি লা ফুয়েন্তে স্থানীয় ব্রডকাস্টার টিভিই’তে বলেছেন, ‘আমাদের লক্ষ্য স্পষ্ট, বাছাইপর্বের বাকি সবগুলো ম্যাচে জয়ী হওয়া। গ্রুপ টেবিলের শীর্ষে থেকে আমার বাছাইপর্ব শেষ করতে চাই।’ অসলোতে গ্রুপের আরেক ম্যাচে জর্জিয়াকে বিদায় করে দিয়ে ২-১ গোলের জয় ছিনিয়ে নিয়েছে নরওয়ে। এই জয়ে স্কটল্যান্ড কিংবা স্পেনকে ধরার ক্ষীণ একটি আশা টিকিয়ে রাখলো স্ক্যান্ডেনেভিয়ার দেশটি। ঘরের মাঠে ২৫ মিনিটে আর্লিং হালান্ডের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল নরওয়ে। এবারের মৌসুমে পাঁচ ম্যাচে এটি হালান্ডের সপ্তম গোল। সব মিলিয়ে ২৬ আন্তর্জাতিক ম্যাচে এটি হালান্ডের ২৫তম গোল। ৩৩ মিনিটে মার্টিন ওডেগার্ড ব্যবধান দ্বিগুন করেন। অতিরিক্ত সময়ে বুডু জিভজিভাডজে এক গোল পরিশোধ করলে তা শুধু সান্তনার হয়েই থেকেছে। সি-গ্রুপে দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মিলানের সান সিরোতে ইউক্রেনকে ২-১ গোলে হারিয়ে আজ্জুরিরা টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। ম্যাচে জোড়া গোল করেছেন ডেভিড ফ্রাত্তেসি। ইন্টার মিলানের এই মিডফিল্ডার প্রথমার্ধে দুটি লো ফিনিশে জোড়া গোল করেন। ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নদের হয়ে ঘরের মাঠের প্রথম ম্যাচে কোচ লুসিয়ানো স্পালেত্তি প্রথম জয়ের স্বাদ পেলেন। এই জয়ে ইউক্রেনের সাথে সমান ৭ পয়েন্ট অর্জণ করে ইংল্যান্ডের থেকে ৬ পয়েন্ট পিছিয়ে দ্বিতীয় স্থান নিশ্চিত করেছে ইতালি। ইউক্রেনের হয়ে প্রথমার্ধের শেষ ভাগে এক গোল পরিশোধ করেছেন অধিনায়ক আন্দ্রি ইয়ারমোলেনকো। স্পালেত্তি বলেছেন, ‘আমাদের খুশী হওয়া উচিৎ। আজ পুরো দল দারুন ফুটবল খেলেছে। মাঠে তারা খুবই সংঘবদ্ধ ছিল।’ ইউক্রেনের কোচ শেরি রেবরভ বলেছেন, ‘ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলার পর অল্প সময়ের মধ্যেই আবার ইতালির বিরুদ্ধে খেলাটা কঠিন ছিল।’ গ্রুপের আরেক ম্যাচে মাল্টাকে ২-০ গোলে পরাজিত করে নর্থ মেসিডোনিয়াও ইতালি ও ইউক্রেনের সমান ৭ পয়েন্ট অর্জন করে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। আগামী মাসে বারিতে মাল্টাকে আতিথ্য দিবে ইতালি। পরের ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলতে ওয়েম্বলি সফরে যাবে। অস্ট্রিয়াকে টপকে গোল ব্যবধানে এগিয়ে গ্রুপ-এফ’র শীর্ষে উঠে এসেছে বেলজিয়াম। যদিও উভয় দলই নিজ নিজ ম্যাচে জয়ী হয়েছে। রোমেলু লুকাকুর জোড়া গোলে ব্রাসেলসে এস্তোনিয়াকে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে বেলজিয়াম। অন্যদিকে সোলনা সফরে স্বাগতিক সুইডেনকে ৩-১ গোলে হারিয়ে জয়ে ফিরেছে অস্ট্রিয়া। ৩৬ব বছর বয়সী ডিফেন্ডার ইয়ান ভার্টনগেনের গোলে ৪ মিনিটে এগিয়ে যায় বেলজিয়াম। ম্যাচ শেষে এই ডিফেন্ডার বলেছেন, ‘আজকের রাতটা ছিল একেবারে নিখুঁত, ৫-০ ব্যবধ্যানে জয়, কোন গোল হজম করিনি আমরা। ক্যারিয়ারের ১৫০তম ম্যাচে গোল করে দলের জয়ে সহযোগিতা করেছি। জাতীয় দল থেকে অনেকেই অবসরে চলে গেছে। কিন্তু আমি এখনো এ ব্যপারে কিছু চিন্তা করিনি।’ সুইডেনে প্রথমার্ধে গোলশুন্য থাকার পর দ্বিতীয়ার্ধে দ্রুত তিন গোলে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় অস্ট্রিয়া। ৫৩ মিনিটে মাইকেল গ্রেগরিশের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল সফরকারী অস্ট্রিয়া। পরের দুই গোল করেছেন মার্কো অরনাটোভিচ। এর মধ্যে তৃতীয় গোলটি ছিল স্পট কিক থেকে। ৯০ মিনিটে এমিল হোম সুইডেনের হয়ে এক গোল পরিশোধ করেছেন। তৃতীয় স্থানে থাকা সুইডেনের থেকে শীর্ষ দুই দল বেলজিয়াম ও অস্ট্রিয়া উভয় সাত পয়েন্ট এগিয়ে রয়েছে। অস্ট্রিয়ার কোচ রাল্ফ রাগনিক বলেছেন, ‘এখন আমরা কিছুটা স্বস্তির নি:শ^াস নিতে পারি।’ টেবিলের তলানির দল আন্ডোরার বিরুদ্ধে ৩-০ গোলের সহজ জয়ে গ্রুপ-আইয়ের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে সুইজারল্যান্ড। সিওনে ৪৯ মিনিচে সেডরিক ইত্তেন স্বাগতিকদের এগিয়ে দেন। ৮৪ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুন করেন গ্রানিথ জাকা। অতিরিক্ত সময়ে জিহার্দান শাকিরির স্পট কিকে জয়ের ব্যবধান বেড়েছে। বুখারেস্টে কসভোকে ২-০ গোলে হারিয়ে সুইসদের থেকে দুই পয়েন্ট পিছিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রোমানিয়া। ৪২ মিনিটে স্ট্রাইকার ভারডাট মুরিকি দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে বাইরে চলে গেলে ১০ জনের দলে পরিনত হয় কসভো। কিন্তু তা সত্ত্বেও ম্যাচে এগিয়ে যেতে রোমানিয়াকে ৮৩ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। অধিনায়ক নিকোলাই স্টানসি গোল করে দলকে এগিয়ে দেন। তার আগে ৬১ মিনিটে তিনি স্পট কিক থেকে গোল করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। ইনজুরি টাইমে ভ্যালেন্টিন মিহাইলা ব্যবধান দ্বিগুন করেন।