আশাশুনিতে অবৈধভাবে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলছে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রমরমা বানিজ্য। অনেক সময় রোগীরা ভুল রিপোর্টের কারনে অকালে জীবন হারাতে হয় অনেকের। ডাক্তারা চিকিৎসা সেবা দিতে বিভ্রান্তির সম্মুক্ষীন হন। এব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোন মাথা ব্যথা নেই। জানা গেছে, আশাশুনির বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ১৫টির অধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক। এ গুলোর মধ্যে, সোনার বাংলা, নিবেদিতা নার্সিং হোম, বাবলা মেমোরিয়াল ক্লিনিক, জনসেবা ক্লিনিক নিবন্ধিত বলে জানা গেছে। অপরদিকে প্রতিষ্ঠানের মালিকরা সরকারী নিয়ম নীতিকে উপেক্ষা করে বছরের পর বছর অবৈধ ভাবে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে বছরের পর বছর এসব প্রতিষ্ঠানে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠানে নেই কোন প্রশিক্ষন প্রাপ্ত দক্ষ টেকনোলজিষ্ট। ফলশ্রুতিতে প্রতিষ্ঠানের ভুল প্যাথলজি রিপোর্টের খেসারত দিতে হচ্ছে রোগীকে। একই পরীক্ষা বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভিন্ন ভিন্ন ফলাফলে দিশেহারা হচ্ছেন দরিদ্র রোগীরা। একাধিকবার পরীক্ষা করে বিভ্রান্ত হয়ে ফিরে যাচ্ছেন সরকারি হাসপাতালে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হাসপাতালের ডাক্তারা বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিরিক্ষার জন্য তাদের পছন্দের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠান। জানা গেছে এসব পরীক্ষা থেকে ডাক্তারা ৫০-৬০% পর্যন্ত কমিশন পেয়ে থাকেন। ক্লিনিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে নেই কোন গুরুত্ব। ক্লিনিকের রাসায়নিক বর্জ্য সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ছাড়া দেওয়া হয়না পরিবেশ ছাড়পত্র, আর পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া মেলেনা প্রাতিষ্ঠানিক রেজিষ্ট্রেশন। তাই সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের নেই বৈধ কোন লাইসেন্স। অবৈধ চিকিৎসা কেন্দ্রে কতটা সঠিক চিকিৎসা দেওয়া যায় সেটাও নিয়েও সুশীল সমাজের রয়েছে নানা প্রশ্ন।আশাশুনির বুধহাটা ও বকুলতলার মোড়ে গড়ে উঠেছে এসব ক্লিনিক ও ডায়াগন্ঠিক সেন্টার গুলো। অভিযোগ রয়েছে, অধিকাংশেই চলছে চিকিৎসার নামে গলাকাটা ব্যবসা। কম্পিউটারাইজড, পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ও অত্যাধুনিক নামে সাইনবোর্ড সর্বস্ব এসব হাসপাতালে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসহায় মানুষ রোগ নিরাময়ের জন্য এসে অপচিকিৎসার জালে আটকা পড়ছেন। এসব কিøনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বসার কথা মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করলেও মূলত তাদের বেশির ভাগই হচ্ছেন অনাভিঞ্জ। এসব ডাক্তারের নাম ভাঙিয়ে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়ে রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো ধরনের মনিটরিং কিংবা জবাবদিহি না থাকায় অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। যে কারণে এসব হাসপাতাল চালু করতে উপজেলায় রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক প্রতিটা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের রেজিস্ট্রেশন নম্বর নিজ নিজ সাইনবোর্ডে দেওয়ার নির্দেশনা থাকার পরও ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কোনোটাতেই দেখা মেলেনি রেজিস্ট্রেশন নম্বর। নেই পরিবেশ অধিদপ্তর পরিবেশগত ছাড়পত্র। নেই স্বাস্থ্যকর পরিবেশ, পরিবেশের ছাড়পত্র পেতে হলে ইএমপি ইআইএ রিপোর্ট করতে হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে কর্মরত একাধিক ব্যক্তি বলেন, সাধারণত রক্ত সঞ্চালনের আগে এইডস, বি ভাইরাস, সি ভাইরাস, সিফিলিসসহ পাঁচটি টেস্ট করা হয়। এসব টেস্টের জন্য প্রয়োজনীয় টেকনোলজি সরকারি হাসপাতাল ছাড়া সাতক্ষীরার কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নেই। কিন্তু আমরা মালিকপক্ষের নির্দেশ মতো সবাইকে বলি সব টেস্টের ব্যবস্থা রয়েছে। তারপর শুরু ক্রস ম্যাচিং করে রক্ত সঞ্চালন করা হয়,রক্ত দেওয়া নেওয়ার ক্ষেত্রে চরছে শুভংকরের ফাঁকি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ভুক্তভোগী সাধারণ রোগীর পরিবারের সদস্যরা জানান, উপকূলীয় ঝুঁকি প্রবণ জেলাগুলোর মধ্যে আশাশুনি অন্যতম।সাধারণ রোগীর পরিবারের সদস্যরা বেসরকারি ক্লিনিক বা হসপিটালে মানসম্মত সেবা নেওয়ার প্রত্যাশায় গেলেও তাদের প্রতিষ্ঠানের জনবল সংকটের জন্য তা পাচ্ছেন না। কিন্তু বেসরকারি ক্লিনিক বা হসপিটাল কর্তৃপক্ষ তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এতে কোটিপোতি বনে যাচ্ছেন ক্লিনিক মালিকরা। সুধী মহল মনে করেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানগুলো কাগজে কলমে ঠিক থাকে। কিন্তু বাস্তবে যা থাকার কথা তা নেই। সেবার মানও অত্যন্ত নিম্ন। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।