২০০০৮ সালে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের বাংলাদেশের জার্সি পরে যারা খেলেছেন, তাদের মধ্যে ৬ জনের পরবর্তীতে হয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক। তবে সেই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে পারফর্ম করে রুবেল, নাসির,শুভাশিষ, ডলার মাহমুদ পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হলেও তাদের ক্যারিয়ার গেছে থেমে।
শুধুমাত্র রনি তালুকদার টিকে আছেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অথচ, মালয়েশিয়ার সেই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়ে ট্রফি উপহার দেয়া বিরাট কোহলি শুক্রবার (১৮ আগস্ট) পূর্ণ করেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৫ বছর।
২০০৮ সালের এই দিনে ডাম্বুলায় মাত্র ১৯ বছর ২৮৭ দিন বয়সে ভারতের সর্বকনিষ্ঠ ওপেনার হিসেবে হয়েছে যে ছেলেটির, সেই বিরাট কোহলিই দেড় দশকের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে জন্ম দিয়েছেন একটার পর বিস্ময়গাঁথা।
৫০১টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে ৫৩.৬৩ গড়ে ২৫৫৮২ রানে নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায়। ৭৬টি সেঞ্চুরিতে শচিনের তিন অঙ্কের ম্যাজিকাল ফিগারের পেছনে ছুটছেন এখন।কোহলির আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৫ বছরের দারুণ এক পর্যেলোচনা করেছে ক্রিকইনফো।
চার-ছক্কা ছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অবশিষ্ট রানগুলোর জন্য পার্টনারদের নিয়ে কোহলিকে ২২ গজী ক্রিজে কতোটা পথ দৌড়ুতে হয়েছে, জানেন ? এর উত্তর ৫১০.০৪ কিলোমিটার!
২০০৮ সালের ১৮ অগস্ট শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ডাম্বুলায় অভিষেকে ওপেনিং পার্টনার হিসেবে পেয়েছিলেন গৌতম গম্ভীরকে।যাঁর সঙ্গে পরবর্তী সময় জুটি বাঁধা তো দূরের কথা, কথায়ও দুজন প্রতিপক্ষ! শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সেই এক দিনের সিরিজ়ে মাত্র একটি হাফ সেঞ্চুরিতে নিজেকে সেভাবে চেনাতে পারেননি। দল থেকে এক বছর বাইরেও কাটাতে হয়েছে। এক বছর পর সেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রত্যাবর্তনের পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি।
বিরাটের প্রথম শতরানও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধেই। ইডেনে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে শতরান করেছিলেন বিরাট। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেটাই তাঁর প্রথম শতরান। ১৫ বছরে তাঁর ঝুলিতে ৭৬টি শতরান। অর্থাৎ, গড়ে প্রতি বছর পাঁচটি করে শতরান করেছেন বিরাট।
১৫ বছরে একাধিক রেকর্ড বিরাটের ঝুলিতে। অভিষেকের পর থেকে সব থেকে বেশি রান (২৫,৫৮২) করেছেন বিরাট। সব থেকে বেশি অর্ধশতরান (১৩১) করেছেন। শতরানের তালিকাতেও (৭৬) এই ১৫ বছরে তিনিই শীর্ষে।
১৫০ রান পার করেছেন ১৬ বার, দ্বিশতরান করেছেন সাত বার। ১৫ বছরে বিরাট ২৫৩৩টি চার মেরেছেন। ৬৩ বার ম্যাচের সেরা হয়েছেন। ২০ বার সিরিজ় সেরা। আইসিসি-র প্রতিযোগিতাতেও বিরাট-পর্বে ধরাছোঁয়ার বাইরে ‘কিং কোহলি’। রান (২৮২০), অর্ধশতরান (২৫), ম্যাচের সেরা (১০) সব কিছুতেই এই ১৫ বছরে শীর্ষে বিরাটই।
১০ মাসের মধ্যে টানা ১০ ওয়ানডে ম্যাচে ১৪২.১৪ গড়ে ৫ সেঞ্চুরি,৩ ফিফটিতে ৯৯৫ রানের রেকর্ডটাও একার করে রেখেছেন। ভারত ক্রিকেটারদের মধ্যে ৫২বলে দ্রুততম সেঞ্চুরিওতার।
২০১১ সালে বিশ্বকাপ ট্রফি জিতে শচিনকে কাঁধে তুলে মাঠ দিয়েছিলেন ল্যাপ অব অনার। শচিন পরবর্তী ভারতীয় ক্রিকেটের ভরসা হয়ে উঠে শচিনের রেকর্ড এখন হুমকির মুখে ফেলেছেন কোহলি। ‘চেজ় মাস্টার’ নামে পরিচিত বিরাট কোহলি। টেস্টে ভারতের সর্বকালের সেরা অধিনায়কও বটে। ভারতকে দিয়েছেন ৪০টি টেস্ট জয়ের স্বাদ। ২০১৪ ও ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট ক্যাপ্টেনসি ক্যারিয়ারে ভারতকে আইসিসির কোনো মেগা আসরের ট্রফি উপহার দিতে পারেননি। সেই আক্ষেপটা থেকেই যাচ্ছে তার।
অধিনায়ক হিসাবেও সব থেকে বেশি রানের (১২,৮৮৩) তালিকায় শীর্ষে তিনি (এই ১৫ বছরের মধ্যে)। অধিনায়ক হিসাবে ৪১টি শতরান, ১১টি ১৫০, সাতটি দ্বিশতরান করেছেন। বিরাট অধিনায়ক থাকাকালীন ২৭ বার ম্যাচের সেরা এবং ১২ বার সিরিজ়ের সেরাও হয়েছেন। ২০২১ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর ক্রিকেটের ক্ষুদ্র সংস্করণে নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়ে হারিয়েছেন ওয়ানডে ক্যাপ্টেনসি।
টেস্টেও অধিনায়ক কোহলি অধ্যায় থেমেছে।২০২২ সালে লাল বলের ক্রিকেটের অধিনায়কত্বও ছেড়ে দেন বিরাট।১৫ বছর পূর্ণ করে ৩৪ বছরের বিরাট শুধুই এগিয়ে চলেছেন। দুই ফরম্যাটের বিশ্বকাপে অভিষেকে সেঞ্চুরির প্রথম রেকর্ড কোহলির।
২০১১ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে এবং ২০১২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরিতে বিশ্বকাপে নিজের অভিষেক রাঙানো কোহলির সামনে আর বকেটি রেকর্ডের হাতছানি। ভারতের সর্বেশেষ বিশ্বকাপ ট্রফি জয়ী দলের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ২০২৩ বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থাকছেন কোহলি।আর একবার ট্রফি উঁচু করে ধরতে পারলে প্রথম ভারতীয় হিসেবে নতুন ইতিহাস রচনা করতে পারবেন কোহলি।