সকল প্রকার ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষনা দিয়েছেন ইংল্যন্ডের সাবেক অধিনায়ক এ্যালিস্টার কুক। এর মাধ্যমে ২০ বছরের বর্ণাঢ্য পেশাদার ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন তারকা এ ক্রিকেটার। ৩৮ বছর বয়সী বাঁ-হাতি এই ওপেনার টেস্ট ক্যারিয়ারে ইংল্যান্ড ব্যাটার হিসেবেসর্বোচ্চ ১২,৪৭২ রান সংগ্রহ করেছেন। সর্বকালের সেরাদের তালিকায় পঞ্চম স্থানে আছেন তিনি। ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায়ের পর কাউন্টি ক্লাব এসেক্সের হয়ে ক্লাব ক্যারিয়ার টেনে নিয়ে গেছেন কুক। ২০১৯ সালে এসেক্সের হয়ে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপ জয় করেছে। সম্প্রতি শেষ হওয়া ঘরোয়া মৌসুমের মাধ্যমে এসেক্সের সাথে কুকের চুক্তিও শেষ হয়েছে। আর এরপরই প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটকেও বিদায় জানানোর সিদ্ধান্ত নেন কুক। এক বিবৃতিতে কুক বলেছেন, ‘বিদায় বলাটা কখনই সহজ নয়। দুই দশকেরও বেশী সময় ধরে ক্রিকেট আমার কাছে চাকরির থেকেও বেশী কিছু ছিল। এটাই ক্রিকেট থেকে সড়ে দাঁড়ানোর সঠিক সময় বলেই আমি মনে করেছি। সবসময়ই চেষ্টা করেছি নিজের সেরাটা দিতে, সে কারনেই হয়তোবা আমি সেরা খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি। কিন্তু এখন নতুন প্রজন্মের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে চাই। সম্ভাব্য সব কিছুই আমি এখানে পেয়েছি। বিশেষ করে কিছু ভাল বন্ধু আমি পেয়েছি যে সম্পর্ক আজীবন টিকে থাকবে। ক্রিকেটের মাধ্যমে আমি যে ধরনের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি তা কখনো কল্পনাও করিনি। মাত্র আট বছর বয়সে উইকহ্যাম বিশপসে অনুর্ধ্ব-১১ দলের হয়ে প্রথম খেলতে নেমে এ পর্যন্ত আসা, সত্যিই অদ্ভূত এক অনুভূতি। সব মিলিয়ে আমি সত্যিই দারুন খুশী।’ এবারের কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে সারের পর দ্বিতীয় স্থান লাভ করেছে এসেক্স। মৌসুম শেষ হবার পর কুকের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিল এসেক্স। কোচ এন্থনি ম্যাকগ্রা বলেছেন তিনি আশা করেছিলেন আরো কিছুদিন হয়তো কুক খেলা চালিয়ে যাবেন। ২০০৩ সালে এই এসেক্সের বিপক্ষে এসেক্স ক্রিকেট বোর্ডের হয়ে শেলটেনহ্যাম ও গ্লাস্টার ট্রফিতে খেলার মাধ্যমে পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন কুক। এরপরের গ্রীষ্মেই কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে এসেক্স দলে ডাক পান। ২০০৫ সালে সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এসেক্সের হয়ে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন। এর পরের বছরই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ইংল্যান্ড লায়ন্স দলে সুযোগ পান, এরপর নাগপুরে ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ড টেস্ট দলের হয়ে অভিষেক হয়। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি সেঞ্চুরি করেছিলেন। টেস্ট ক্যারিয়ারে খেলেছেন ১৬১টি ম্যাচ, এর মধ্যে টানা খেলেছেন ১৫৯টি ম্যাচ যা একটি বিশ^ রেকর্ড। কুকের ১২,৪৭২ টেস্ট রানের মধ্যে রয়েছে ৩৩টি সেঞ্চুরি যা কোন ইংলিম ব্যাটারের জন্য সর্বোচ্চ। টেস্ট ওপেনার হিসেবে কুকের ১১,৯৪৫ রান অন্য কোন দলের কোন ওপেনারই স্পর্শ করতে পারেননি। ২০১২-১৭ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ডের টেস্ট অধিনায়ক ছিলেন। তার নেতৃত্বে ইংল্যান্ড ৫৯ ম্যাচ খেলেছে। ২০১৩ ও ২০১৫ সালে ঘরের মাঠে তার নেতৃত্বে ইংল্যান্ড এ্যাশেজ সিরিজ জয় করেছিল। কিন্তু একইসাথে ২০১৩-১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৫-০ ব্যবধানে বিধ্বস্তও হয়েছিল। ২০১০-১৪ সাল পর্যন্ত ৬৯টি ওয়ানডে ম্যাচে ইংল্যান্ডকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে কুক ২৬,৬৪৩ রান সংগ্রহ করেছেন। ৪৬ গড়ে এর মধ্যে রয়েছে ৭৪টি সেঞ্চুরি। ইংল্যান্ডের ক্যারিয়ার শেষে কুক কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে ৩৮৮৯ রান সংগ্রহ করেছেন। ক্যারিয়ারে সর্বমোট ১৭৮টি এ-শ্রেণীর ম্যাচ খেলেছেন। এ ছাড়া ৩২টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচও খেলেছেন।