এফএনএস : দেশে চিহ্নিত অতি ঝুঁকিপূর্ণ সরকারি ভবন অপসারণে অনীহা দেখাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ভূমিকম্প সহনশীলতা প্রকল্পের আওতায় ৪২টি সরকারি ভবনকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে এক সপ্তাহের মধ্যে খালি ও তিন মাসের মধ্যে ভেঙে ফেলার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু সেসব ভবন এখনো ব্যবহার হচ্ছে। সাত মাস আগে রাজউক বলেছিলো, মালিকরা নিজ উদ্যোগে এই ভবন আগামী তিন মাসের মধ্যে না ভাঙলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এসব ভবন ভেঙে দেবে। সেক্ষেত্রে মালিকপক্ষের কাছ থেকে খরচ আদায় করা হবে। কিন্তু সাত মাস পেরিয়ে গেল সেসব ভবন এখনো ভাঙা হচ্ছে না। রাজউক বলছে, অনেকেই তাদের ভবন ঝুিঁকপূর্ণ নয় দাবি করছে। রাজউক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দুর্যোগ মোকাবিলায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে সরকারি ও স্বায়ত্তশায়িত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ভূমিকম্প সহনশীলতা প্রকল্প (আরবান রেজিলিয়েন্স)-এর আওতায় ২ হাজার ৭০৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ২০৭টি হাসপাতাল, ৩৬টি থানা ও ৩০৪টি অন্যান্য ভবনের জরিপ চালানো হয়। ওসব ভবনের মধ্যে ৫৭৯টির প্রিলিমিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট (পিইএ) করা হয়। এতে ৪২টি ভবন অতি ঝুঁকিপূর্ণ বলে রিপোর্ট দেয়া হয়। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ ১৮৭টি ভবনকে ডিটেইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট করে সেগুলো মজবুত (রেক্টিফাই) করতে প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেয়া হলেও ভবন অপসারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনীহা দেখাচ্ছে। সূত্র জানায়, অতি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় যে ৪২টি সরকার ভবন ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ভবন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন, মাদ্রাসা বোর্ডের এক ও শিক্ষাপ্রকৌশল অধিদপ্তরের ৩০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে দুই দফা চিঠি দিয়েও কাজ হয়নি। তাই চরম ঝুঁকি নিয়েই হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিদপ্তরের কাজ চলছে। সূত্র আরো জানায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মীর মশাররফ হোসেন হল ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় ১২ মার্চ ভাঙার সুপারিশ করেছিলো রাজউক। পাশাপাশি জাবির পুরনো কলা ভবন, নতুন কলা ভবন, কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবন এবং জাবি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবন মজবুতকরণের সুপারিশও করা হয়েছে। কিন্তু এরইমধ্যে দুই বার চিঠি দিলেও কর্ণপাত করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একই অবস্থা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি ভবনের। এই প্রতিষ্ঠানের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ ভবন, অর্থনীতি বিভাগ ভবন, কলা ভবনের দুটি অংশ। এই ভবনগুলোতে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করে থাকে। মাঝেমধ্যে ওসব ভবনের ক্লাসরুমের ওপরের ছাঁদ থেকে পলেস্তরা ও ইট খসে পড়ে। বিশেষ করে কলা ভবনের অবস্থা খুবই খারাপ। প্রায়ই ছাঁদ থেকে পলেস্তারাসহ ইট খুলে পড়ছে। একইভাবে রাজধানীর শাহবাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) যে ভবনটিতে বসেন, সেটি অতি ঝুঁকিপূর্ণ। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ ১৭ তলার ডি ব্লকও। বিএসএমএমইউর ‘এ’, ‘বি’ ও ‘ডি’ ব্লকের ভবনকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে সেগুলো খালি করতে নির্দেশ দেয় রাজউক। মে মাসে চিঠি দেওয়ার পর এখন পর্যন্ত বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার টেকনোলজি ভবন, মাদ্রাসা বোর্ডের ভবন এবং শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ভবনও ঝুঁকিতে রয়েছে। ঝুঁকি চিহ্নিত করে রাজউক সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিলেও তারা কোনো ভবন খালি করেছে এমন তথ্য নেই রাজউকের কাছে। সতর্ক করার পরও কোনো সংস্থা কাজ করছে না বিধায় রাজউক আবারো চিঠি দেয়। কিন্তু এরপরও টনক নড়ছে না প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের। এদিকে এ বিষয়ে আরবান রেজিলিয়ান্স প্রকল্পের পরিচালক আবদুল লতিফ হেলালী জানান, দুৎদফা চিঠি দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ভেঙে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু তারা শুনছে না। কয়েক দিনের ভেতর তৃতীয় দফা চিঠি দিয়ে এসব ভাঙার কথা জানিয়ে দেয়া হবে। না ভাঙলে রাজউকেরই ব্যবস্থা নিতে হবে।